তৃণমূল এবং বিজেপির জন্য দক্ষিণবঙ্গ এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন?

পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া এবং হুগলিতে আছে ১০৯টি আসন। এগুলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এবং এই আসনগুলোই পরবর্তী সরকার নির্ধারণ করতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এসব আসনের একটি অংশে তৃতীয় দফায় ও আজ শনিবার চতুর্থ দফায় কিছু অংশে ভোট হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় বাকি অংশে ভোট গ্রহণ করা হবে।
তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া এবং হুগলিতে আছে ১০৯টি আসন। এগুলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এবং এই আসনগুলোই পরবর্তী সরকার নির্ধারণ করতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এসব আসনের একটি অংশে তৃতীয় দফায় ও আজ শনিবার চতুর্থ দফায় কিছু অংশে ভোট হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় বাকি অংশে ভোট গ্রহণ করা হবে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে দাপট দেখাতে পারলেও দক্ষিণে তৃণমূলের ঘাঁটিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। যদিও বিজেপি এই অঞ্চলে তাদের ভোটার সংখ্যা বাড়িয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলাগুলো তার আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া। অন্যদিকে, বিজেপিও বাংলার ক্ষমতায় বসতে দক্ষিণেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহ এখন কলকাতায় আছেন। সেখানে গতকাল শুক্রবার তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভবানীপুরে যান। সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগণার হাওড়া, জগৎদল এবং মধ্যমগ্রামে যান অমিত শাহ। সুতরাং, কোন অঞ্চলগুলো এখন তার ফোকাসে তা এখানে স্পষ্ট।

ইন্ডিয়া টুডের তথ্য অনুযায়ী- কলকাতায় ১০টি আসন, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ৩২টি, উত্তর ২৪ পরগণা ৩৩টি, হাওড়া ১৬টি এবং হুগলির ১৮টি আসন আছে। সবমিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ১০৯টি। অর্থাৎ এই জেলাগুলো রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১০৯টি দখল করে আছে। এগুলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি এবং এগুলোই পরবর্তী সরকার নির্ধারণ করতে পারে।

২০১৬ সালের নির্বাচনে এখানে তৃণমূলের জোয়ার ছিল। ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ১০৯টি আসনের মধ্যে ৯৮টিতে জিতেছিল তৃণমূল। একই সময়ে, প্রধান বিরোধী দল বাম-কংগ্রেস জোট ১১টি জিতেছিল এবং বিজেপি মাত্র একটি আসনে জিতেছিল।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপির কিছুটা উন্নতি হলেও তৃণমূলের ভোট মাত্র এক শতাংশ কমে ৪৮ শতাংশে নেমেছিল। তবে দলটি বিজেপির চেয়ে ১৩টি আসনে পিছিয়ে ছিল। তৃণমূলের আসন ভাগের পরিমাণ ২০১৬ সালের ৯৮টি থেকে কমে ২০১৯ সালে ৮৫টিতে নেমে আসে। একই সময়ে বিজেপি কলকাতার তিনটি- রাশবেহারি, জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুরসহ ২৪টি বিভাগে এগিয়ে ছিল।

বিজেপির আসন দখলের চেয়ে ভোটারের পরিমাণ বৃদ্ধি দলটির কাছে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কারণ, ২০১৬ সালে বিজেপি মাত্র ৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, যেখানে ২০১৯ সালে দলটি ৩৭.৫ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৬ সালের তুলনায় ২৮ শতাংশ ভোট বাড়ে বিজেপির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এই অঞ্চলের মধ্যে হাওড়া ও হুগলি জেলায় আরও ভালো ফল করেছে বিজেপি। কিন্তু, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও কলকাতায় তারা সেই অনুযায়ী প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু, তৃণমূল জেলাগুলোকে দারুণ ফল করেছিল। এ কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব আসন নিয়ে এবারও আশাবাদী।

বিজেপি যদি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চায়, তাহলে এই অঞ্চল থেকে তৃণমূলকে অবশ্যই হারাতে হবে। একইসঙ্গে, তৃণমূল যদি ক্ষমতায় থাকতে চায় তাহলে তাদেরও এখানে আগের অবস্থান ধরে রাখতে হবে। অন্যথায়, এটি রাজ্যে ক্ষমতা হারাবে।

বিজেপি এখানের ১৮টি লোকসভা আসন পেয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে ভোটের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পেরেছে। আবার এই বিধানসভা নির্বাচনে এসব অঞ্চলে ভালো প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। তারা কেবল জয় শ্রী রাম নয়, বাঙালি পরিচয়ের রাজনীতির সঙ্গেও পরিচিত হয়েছে।

অতএব, বিজেপি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুসহ কয়েকজন বাঙালি আইকনকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, মমতা জানেন- তিনি যদি এই আসনগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন। তাহলে তার পক্ষে সরকার গঠন করা অত্যন্ত কঠিন হবে। তাই তার জয় আজকের ভোটগ্রহণের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

আরও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন: আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট নিয়ে কংগ্রেসে বিরোধ

বিধানসভা নির্বাচনে মমতার পাশে শিবসেনা

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর

পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন: আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট নিয়ে কংগ্রেসে বিরোধ

‘মোদি-দিদি আসলে এক’ কলকাতা বিগ্রেড সমাবেশে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট

বিজেপিকে সুবিধা দিতেই ৮ দফায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত, অভিযোগ মমতার

‘জয় বাংলা স্লোগানে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানাতে চায়’

পশ্চিমবঙ্গে মমতাই থাকবে না বিজেপি আসবে

Comments

The Daily Star  | English
Workers rights vs corporate profits

How some actors gambled with workers’ rights to save corporate profits

The CSDDD is the result of years of campaigning by a large coalition of civil society groups who managed to shift the narrative around corporate abuse.

9h ago