জমজমাট লড়াইয়ে বার্সাকে ফের হারিয়ে শীর্ষে রিয়াল

kroos barca
ছবি: রিয়াল মাদ্রিদ টুইটার

ম্যাচের প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। গোলপোস্ট বাধা না হয়ে দাঁড়ালে আরও বাড়তে পারত ব্যবধান। প্রথমার্ধের বিবর্ণ দশা কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াল বার্সেলোনা। এক গোল শোধ করার পর সমতায় ফেরার বেশ কিছু সুযোগ হারাল তারা। অনেক আক্রমণ চালিয়ে রিয়ালও পারল না ব্যবধান বাড়াতে। তবে জয় নিয়ে ঠিকই মাঠ ছাড়ল জিনেদিন জিদানের দল। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে অসাধারণ জয়ে তারা উঠে গেল স্প্যানিশ লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।

শনিবার রাতে আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচের দেখা মিলেছে। মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোতে ঘরের মাঠে ২-১ গোলে জিতেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। করিম বেনজেমার গোলে তারা এগিয়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন টনি ক্রুস। বিরতির পর বার্সার একমাত্র গোলটি করেন অস্কার মিনগেজা। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে কাসেমিরো লাল কার্ড দেখলে ১০ জন নিয়ে খেলা শেষ করতে হয় স্বাগতিকদের।

চলতি লা লিগায় দুটি ক্লাসিকোতেই জিতল রিয়াল। গত অক্টোবরে বার্সার মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে ৩-১ গোলে জিতেছিল তারা। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর এমন ঘটনা ঘটল প্রথমবার। পাশাপাশি ১৯৭৮ সালের পর প্রথমবারের মতো টানা তিনটি ক্লাসিকোতে পূর্ণ পয়েন্ট পেল লস ব্লাঙ্কোসরা।

গোটা ম্যাচে বল দখলে আধিপত্য দেখায় রোনাল্ড কোমানের শিষ্যরা। তাদের পায়ে ৬৯ শতাংশ সময়ে ছিল বল। রিয়ালের অবশ্য এটা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। তারা বেছে নিয়েছিল পাল্টা আক্রমণ নির্ভর কৌশল। তাতে সাফল্যও মিলেছে। দুবার তাদের প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে না ফিরলে ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়ে যেত আরও আগেই। একেবারে শেষ মুহূর্তে ক্রসবারের কারণে বার্সাকেও সমতায় না ফিরতে পারার আক্ষেপে পুড়তে হয়।

benzema barca
ছবি: টুইটার

১৩তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগ কাজে লাগিয়ে লিড নেয় রিয়াল। ডান প্রান্ত থেকে লুকাস ভাজকেজের নিখুঁত ক্রসে চমৎকার ফ্লিকে জাল খুঁজে নেন বেনজেমা। এবারের লিগে এটি এই ফরাসি স্ট্রাইকারের ১৯তম গোল। তার উপরে আছেন কেবল বার্সা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তার গোল ২৩টি।

বেনজেমার গোলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন একাদশে ফেরা ফেদেরিকো ভালভার্দে। নিজেদের সীমানা থেকে প্রায় ৪০ গজ দৌড়ে অতিথিদের মাঝমাঠ এলোমেলো করে তিনি পাস দিয়েছিলেন ভাজকেজকে। কিছুক্ষণ পরই সমতায় ফেরার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বার্সা। তবে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মেসির ক্রসে অনেকটা লাফিয়েও ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি ওসমান দেম্বেলে।

২৮তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় স্পেনের সফলতম ক্লাব রিয়াল। টনি ক্রুসের ফ্রি-কিক জালে পৌঁছাতে পায় ভাগ্যের কিছুটা সহায়তাও। এই জার্মান মিডফিল্ডারের শট বার্সা ডিফেন্ডার সার্জিনো দেস্তের পিঠে লেগে দিক পাল্টায়। তবে বলের সোজাসুজি গোললাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জর্দি আলবা। তিনি হেড করলেও পারেননি বল রুখতে। দায় এড়ানোর উপায় নেই দেস্তের। তিনি উল্টোদিকে ঘুরে গিয়েছিলেন।

রিয়াল ফ্রি-কিক পেয়েছিল ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ফাউলের শিকার হওয়ায়। গতিময় এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দেখান ঝলক। তাকে আটকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় বার্সার রক্ষণভাগকে। ছয় মিনিট পর স্কোরলাইন হতে পারত ৩-০। কিন্তু ভিনিসিয়ুসের পাসে ভালভার্দের কোণাকুণি শট পোস্টে বাধা পায়। ফিরতি বলে ভাজকেজের শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।

messi and vinicius
ছবি: টুইটার

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল কাতালানরা। মেসির বাঁকানো কর্নার-কিক সবাইকে ফাঁকি দিলেও ক্রসবারকে পরাস্ত করতে পারেনি। তবে বল জালে ঢুকে গেলে বিতর্ক তৈরি হওয়ার অবকাশ ছিল। কারণ, রেফারির কর্নার দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল।

দ্বিতীয়ার্ধে কৌশলে পরিবর্তন আনে বার্সা। ৩-৪-২-১ ফরমেশনের বদলে তারা ৪-৩-৩ বেছে নেয়। রিয়াল শুরু থেকেই ওই ফরমেশনে খেলছিল। এসময় ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে জোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় খেলার গতি কিছুটা কমে আসে। তবে বার্সা ধীরে ধীরে আক্রমণে মনোযোগী হতে থাকে। ৬০তম মিনিটে ম্যাচে ফেরার পথও পেয়ে যায় তারা।

আলবার ক্রসে ডান পায়ের টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন মিনগেজা। তরুণ এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের এটাই ক্লাসিকোতে প্রথম ম্যাচ। বদলি নামা আঁতোয়ান গ্রিজমানের কৃতিত্বও কম নয়। তিনি দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল ছেড়ে দেওয়ায় বিভ্রান্ত হয় রিয়ালের রক্ষণভাগ। বাকিটা দারুণভাবে সারেন অরক্ষিত মিনগেজা।

৬২তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট রোনালদ আরাউহোর পায়ে লেগে পোস্টে বাধা পায়। ফলে ব্যবধান বাড়ানো হয়নি রিয়ালের। চার মিনিট পর আবারও ব্যর্থতা গ্রাস করে তাদের। লুকা মদ্রিচ নিজেদের সীমানা থেকে উঁচু করে বাড়ান নজরকাড়া পাস। বল ধরে এগিয়ে বাম প্রান্তে ফাঁকায় থাকলেও শট নেননি ভিনিসিয়ুস। বরং দুর্বল ক্রস করেন বেনজেমার উদ্দেশ্যে। যা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ক্লেঁমো লংলে।

mingueza
ছবি: টুইটার

দুই মিনিট পর ফের সুযোগ হাতছাড়া করে রিয়াল। ভিনিসিয়ুস ডি-বক্সের মধ্যে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে না পারলেও বল পেয়ে যায় ক্রুস। বিপজ্জনক জায়গা থেকে তার হেড লক্ষ্যেই থাকেনি! অথচ টের স্টেগেন উল্টো দিকে ঝাঁপ দেওয়ায় পোস্ট ছিল ফাঁকা। পরের মিনিটগুলোতে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে বার্সা। তবে লাভ হয়নি।

৭১তম মিনিটে মিনগেজার জোরালো শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর মেসির ক্রসে বদলি ইলাইশ মোরিবার হেড সহজেই লুফে নেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। ৮৩তম মিনিটে বার্সার পেনাল্টির আবেদনে উত্তেজনা ছড়ায় মাঠে। মার্টিন ব্র্যাথওয়েট ডি-বক্সে ফারলান্দ মেন্দির হালকা ছোঁয়ায় পড়ে গিয়েছিলেন। রেফারি আবেদন নাকচ করার পাশাপাশি প্রতিবাদ করায় হলুদ কার্ড দেখান আলবা ও কোমানকে।

৯০তম মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় রিয়াল। দুই মিনিটের মধ্যে দুবার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কাসেমিরো। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া। শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগে দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয় বার্সার। মোরিবার শট ক্রসবারে লাগার পর ফিরতি বল উড়িয়ে মারেন আলবা।

৩০ ম্যাচে ২০ জয় ও ৬ ড্রয়ে রিয়ালের অর্জন ৬৬ পয়েন্ট। মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকায় লিগের পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে নেমে গেছে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। তাদের হাতে অবশ্য একটি ম্যাচ রয়েছে। ২৯ ম্যাচে দিয়েগো সিমিওনের দলের পয়েন্টও ৬৬। তিনে নেমে যাওয়া বার্সেলোনার নামের পাশে ৩০ ম্যাচে ৬৫ পয়েন্ট।

Comments

The Daily Star  | English

Govt calls for patience as it discusses AL ban with parties

Taken the initiative to introduce necessary amendments to the ICT Act, says govt

1h ago