রোহিঙ্গারা যেখানেই থাকুক, মানবিক সংস্থাগুলো সেবা দিতে বাধ্য: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

মানবিক সংস্থাগুলো ধীরে ধীরে ভাসানচরে স্থানান্তরিত এক লাখ রোহিঙ্গাদের পরিষেবা না দিলে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের নামে তারা যে পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করেছে তার ১০ শতাংশ দাবি করবে বাংলাদেশ। এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ কথা জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার তার বাসভবনে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাদের অর্থ প্রদান করতে হবে। কেননা তহবিল আসছে রোহিঙ্গাদের জন্য। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পরিষেবা দিতে না চাইলে আমরা ১০ শতাংশ তহবিল দাবি করব।’

কক্সবাজার জেলায় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ধীরে ধীরে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে, যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কোথায় বাস করছেন, তা নিয়ে মানবিক সংস্থাগুলোর মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়।’

ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কুতুপালং, কক্সবাজার, বরিশাল কিংবা ভাসানচরে বাস করছে কি না, তা বিষয় নয়। এটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়। তাদের মাথাব্যথা হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের পরিষেবা প্রদান করা নিয়ে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন পরিষেবা প্রদানে তারা বাধ্য।’

তিনি বলেন, ‘যদি মানবিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের পরিষেবা না দেয়, তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তহবিল সরবরাহ করবে না। ফলে তারা তীব্র কষ্টের মুখে পড়বে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ও হোস্ট সম্প্রদায়ের নামে অর্থ সংগ্রহ করার পরেও তারা জানে না কীভাবে অর্থ ব্যয় করে।’

ভাসানচরের প্রযুক্তিগত দলের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের পর্যবেক্ষণ খুব ভালো ও ইতিবাচক। সংক্ষেপে, তারা একটি ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘তারা তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একটি ১০-পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে এবং ইতোমধ্যে তারা দুই পৃষ্ঠার একটি সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে।’

১ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন সুবিধা সম্পর্কে সরাসরি ধারণা লাভ করতে জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত মার্চে ভাসানচর পরিদর্শন করে।

তাদের দুই পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপে দলটি তিনটি বিষয় নির্দেশ করেছে- রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষা, বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা।

ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের শিক্ষা প্রদানে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। তবে, সেটি মিয়ানমারের ভাষাতেই হওয়া উচিত।’

‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং, রোহিঙ্গারা দেশে ফিরলে সহজেই তাদের সমাজে মিশে যেতে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের শিক্ষা সহায়তা করবে,’ তিনি বলেন।

বেড়িবাঁধের উচ্চতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, তারা অবশ্যই তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে এটি করবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা সন্দ্বীপ হয়ে ভাসানচরে যেতে পারবেন। কেননা এই পথে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। ‘ভাসানচরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ভাসানচর বাংলাদেশের ৭৫টি দ্বীপের একটি এবং এটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়েও ১০ গুণ বড়।’

কূটনীতিকদের সফরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, তারা সেখানে দৃঢ় কাঠামো ব্যবস্থা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ‘তারা এই ব্যবস্থার খুব প্রশংসা করেছে। তারা এটা পছন্দ করেছে।’

‘দুজন কূটনীতিকের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছিল। তারা ভাসানচর পছন্দ করেছে’, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন।

বর্তমানে ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ৩ এপ্রিল বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

তারা ভাসানচরে বিদ্যমান সুবিধাগুলো সম্পর্কে তাদের ‘উচ্চ সন্তুষ্টি’ জানিয়েছিলেন, যাকে তারা কক্সবাজারের জঞ্জাল শিবিরের তুলনায় নিরাপদ, সুরক্ষিত অপরাধ মুক্ত বলে বিবেচনা করেছিলেন।

মিয়ানমার থেকে গণপ্রস্থানের পর থেকে রোহিঙ্গাদের অনুকরণীয় মানবিক সহায়তার জন্য রোহিঙ্গারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানায়।

ভাসানচরে আসা কূটনীতিকদের উদ্দেশে এক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি বলেন, ‘আমি চাই আমার সন্তানরা তাদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয় নিয়ে তাদের দেশে বেড়ে উঠুক।’

কিছু রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ এবং তাদের কৃষিকাজ ও মাছধরার সুযোগ প্রদানের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যা তাদের কর্মঠ হতে সহায়তা করবে।

তুরস্ক, ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস- দশটি দূতাবাস-প্রতিনিধি দলের মিশনের প্রধানদের জন্য ভাসানচরে দিনব্যাপী এই পরিদর্শনের আয়োজন করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভাসানচরে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা স্থানান্তর তাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সামগ্রিক প্রচেষ্টারই অংশ।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago