করোনায় দুর্ভোগে নারী উদ্যোক্তারা

নারী মালিকানাধীন ৪১ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ: সিপিডি
স্টার ফাইল ছবি

করোনাকালে সৃষ্ট সংকটে দেশে নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত ৪১ শতাংশেরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসা পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ব্যবসা সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছেন কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের (সিএমএসএমই) সাত দশমিক এক শতাংশ নারী উদ্যোক্তা।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সমীক্ষাটি থেকে জানা যায়, মহামারিকালে দুই দশমিক নয় শতাংশ নারীকে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে ছোট বা কম খরচ হয় এমন জায়গায় স্থানান্তর করতে হয়েছে। প্রায় ৪৪ দশমিক চার শতাংশ ভাড়া দিতে পারেননি। এ ছাড়া ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, তাদের পক্ষে কর ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক সুরক্ষার অভাবে সার্বিকভাবে নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়েছে বলে সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় গত বছরের অক্টোবরে দেশের আট বিভাগের ৩৪টি জেলার ৭০ জন নারী উদ্যোক্তার ওপর টেলিফোনের মাধ্যমে সমীক্ষাটি পরিচালনা করে সিপিডি। সমীক্ষায় কোভিড-১৯ বিষয়ক সরকারি আর্থিক উদ্যোগগুলোর জেন্ডার সংবেদশীলতা অনুসন্ধান করে নারীবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় এ সংক্রান্ত একটি ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি।

‘সরকারের আর্থসামাজিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা: নারীরা কতটা উপকৃত হয়েছে’ শীর্ষক এ সংলাপে বলা হয়, সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৯৩ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা সরকার-ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণের জন্য আবেদন করেননি। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৮ দশমিক ছয় শতাংশ নারী এ প্যাকেজ সম্পর্কে জানতেনই না। এসবের কারণ হিসেবে তথ্যের ঘাটতি, প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতার মতো বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। এ ছাড়া জরিপটিতে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই আয় কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। অনেকেই জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো তাদেরকে পর্যাপ্ত ঋণ দিতে আগ্রহী নয়।

সংলাপে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের এ সংক্রান্ত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো তৈরির সময় নারীদের কথা মাথায় রাখা হয়নি। তাই মহামারিকালে নারীদের বিশেষ চাহিদাগুলো পূরণে পুরোপুরি সফল হতে পারেনি এগুলো। এ ছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে ঋণের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নগদ টাকার প্রয়োজন বেশি বলে উল্লেখ করে সিপিডি।

সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আর্থিক বিষয়ে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন। মহামারিতে বাল্য বিয়ে, গৃহস্থালি কাজের চাপ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বিষয়ে সঠিক লোকজনকে জানাতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মহামারিকালে নারীদের চ্যালেঞ্জগুলো সরকারের নজরে আছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ চলছে।’

সব প্রণোদনা প্যাকেজে স্বচ্ছতার সঙ্গে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শোকো ইশিকাওয়া বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক নারীকে দরিদ্র হতে হয়েছে।’ এ ছাড়া সংলাপে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজগুলো থেকে বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তাই উপকার পাচ্ছেন না। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি তাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।’

সংলাপে কোভিড-১৯ বিষয়ক সহায়তার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানায় সিপিডি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক লীলা রশিদ, পারসোনার সিইও কানিজ আলমাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম, অ্যাকশন-এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন সংলাপে অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

3h ago