‘রিকশা নিয়ে গেল, কেউ তো খোঁজ নিল না, খাব কী বাচ্চার ওষুধ কিনব কীভাবে’

‘ঘরে আগামীকালের কিছু খাবার আছে, পরশু কী খাব জানি না। বাচ্চার ওষুধ দরকার, কিনতে পারছি না। রিকশা মালিকের চাপে রাতে বাসায় ফিরতে পারিনি। বাচ্চার ওষুধ কিনতে না পারার যে কষ্ট...।’
173402795_492977471830298_3595566011972587302_n.jpg
রিকশাচালক আলমগির হোসেন লালন। ছবি: স্টার

‘ঘরে আগামীকালের কিছু খাবার আছে, পরশু কী খাব জানি না। বাচ্চার ওষুধ দরকার, কিনতে পারছি না। রিকশা মালিকের চাপে রাতে বাসায় ফিরতে পারিনি। বাচ্চার ওষুধ কিনতে না পারার যে কষ্ট...।’

কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক আলমগির হোসেন লালন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শহরের ছয় রাস্তা মোড় থেকে তার একমাত্র আয়ের উৎস রিকশাটি আটক করে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রিকশা মালিকের উপস্থিতিতে রিকশাটি ফেরত দেয় কুষ্টিয়া মডেল পুলিশ স্টেশন। তার আগে কেটে যায় ৩০ ঘণ্টা।

লালন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বেশি কষ্ট পাচ্ছেন তিনি তার চার বছরের বাচ্চাটির জন্য। বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগেছে। তার জন্য ওষুধের টাকা যোগাড় করতে লকডাউনের মধ্যেই রিকশা চালাতে বের হয়েছিলেন। রিকশা মালিক রিকশা দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু, বাচ্চার কথা শুনে রাজি হন।

‘রিকশা মালিকির চাপে বাড়িতিই যাতি পারিনি। বাচ্চার মা কইলো রিকশা মালিক বাড়ির পার আইসে বকাবাদ্য করতেছে। তাই বাড়ি আর গেলাম না’, লালন বলেন।

৩০ ঘণ্টা কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে লালন জানান, আটকের পর থেকে থানার সামনে, পরে রাতে শহরের চড়কুঠিপাড়া তার বোনের বাড়িতে এবং আজ সকাল থেকে আবার থানাতেই ছিলেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় লালনের সঙ্গে কথা হয়েছিল।

থানা সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে আইন অমান্য করে রিকশা চালাতে বের হলে কুষ্টিয়া পুলিশ বুধবার ৩৬টি ও বৃহস্পতিবার ১৬টি রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক আটক করে।

কেউ কোনো খোঁজখবর নিয়েছে কি না? লালনকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, কেউ খোঁজ নেয়নি, সহায়তা তো দূরের কথা। তিনি রিকশা মালিককে নিয়েই বেশি চিন্তায় ছিলেন। তিনি এখনো লালনকে গালাগালি করছেন কারণ থানা থেকে রিকশা ছাড়াতে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ মুচলেকা দিতে হয়েছে।

রিকশা নিয়ে মালিক গ্যারেজে চলে গেছেন বলে জানান লালন।

এখন কী করবেন? জানতে চাইলে লালন বাসায় ফিরবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ওষুধ কিনতে হবে বাচ্চার। কিন্তু টাকা নেই। রিকশা চালাতে না পারলে কোথায় পাব টাকা... কী খাব... বাচ্চার ওষুধই বা কিনব কীভাবে?’

আলমগীর হোসেন লালন কুষ্টিয়া শহরে রিকশা চালাচ্ছেন প্রায় সাত বছর। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার মাছপাড়া। সেখান থেকে কুষ্টিয়া এসে মঙ্গলবাড়িয়া মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে তিনিসহ তিনটি পরিবার থাকে। চার বছরের দুই যমজ ছেলে তার।

‘বেঁচে থাকতে হলে কাল থেকেই অন্য কাজ খুঁজতে হবে’, বলেন তিনি।

লালনের মতো এভাবে বিপদে পড়েছেন এ শহরে বসবাসকারী নিম্নআয়ের অনেক মানুষ। তাদের কেউ দিনমজুর, কেউ হোটেল শ্রমিক, কেউ কিচেন মার্কেটের শ্রমিক। দিন আনেন দিন খান। তাদের অনেকেই মনে করছেন, এ রকম লকডাউনে তাদের বিপদে পড়তেই হবে। লকডাউনে কাজের ক্ষেত্র কমে যাওয়ায়, অনেককেই রিকশা বা অটো নিয়ে বের হতে হয়।

থানাপাড়া বাঁধের কামাল উদ্দিন জানান, তিনি নিজের রিকশা চালান। ভবিষ্যতে লকডাউন চলা অবস্থায় ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি আদেশ মেনে সড়কে আর রিকশা চালাবেন না বলে তাকে মুচলেকা দিতে হয়েছে। তার দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করে। তারাও এখন ঘরে বসে আছে। ঘরে সদস্য সংখ্যা ৬ জন। জমানো কোনো অর্থ নেই তাদের। এ কয়দিন কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে তার শঙ্কা।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আইনের কড়াকড়ি করতে গিয়েই এসব যানবাহনগুলো আটক করতে হয়েছে। যেহেতু আইনের প্যাঁচে পড়তে হয়েছে, তাই আইনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের যেতে হয়েছে। সময় লেগেছে ৪৮ ঘণ্টা। তাদের কী করার আছে। কারণ আইন শিথিল করলেও সমালোচনা আছে।’

যোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নিম্নআয়ের লোকদের জন্য কী ব্যবস্থা হবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা আসেনি। লকডাউন কয়দিন চলে সেটা তার ওপর নির্ভর করবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Metro now connects Uttara with Motijheel

Uttara-Motijheel Metro: 8am-8pm service not before April

Commuters may have to wait until July for service until midnight on the entire Uttara-Motijheel section, hints Metro rail authorities

3h ago