মেজবাহ থেকে ওয়াসিম: এক রাজকুমারের বিদায়

সময়টা ১৯৬৪। বাংলাদেশ তখন পূর্ব পাকিস্তান। সেই সময়ে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য তিনি ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন। তিনি মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। বডি বিল্ডিংয়ে ছিল পূর্ণ মনোযোগ।

সময়টা ১৯৬৪। বাংলাদেশ তখন পূর্ব পাকিস্তান। সেই সময়ে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য তিনি ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন। তিনি মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। বডি বিল্ডিংয়ে ছিল পূর্ণ মনোযোগ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিচয় হয় বিখ্যাত পরিচালক এসএম শফীর সঙ্গে। সুদর্শন মেজবাহকে তিনি চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব দেন। কিন্তু, ইতিহাসে স্নাতকোত্তর মেজবাহর মাথায় তখন অন্য কিছু। এক প্রকার জোর করেই এসএম শফী তাকে নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে।

শফীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ চলচ্চিত্রে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অভিনয় করেন ছোট এক চরিত্রে। তার সেই অভিনয় দেখে তাকে পরিচালক মোহসীন প্রস্তাব দেন নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের। ছবির নাম ‘রাতের পর দিন‘। তার বিপরীতে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা ববিতা। এই এক ছবিই তাকে এনে দেয় সুপারস্টার খ্যাতি। তারপর শুধুই এগিয়ে চলা।

একে একে সাফল্যের পালকে যুক্ত হয় এসএম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ ছবি। তার বিপরীতে ছিলেন অলিভিয়া। এই এক ছবি ৪৬টি দেশে প্রদর্শিত হয়েছিল। পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। সেই থেকে ৯০ দশকের শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়কদের অন্যতম।

রাজ্জাক বা ফারুক যখন রোমান্টিক ছবিতে ঝড় তুলছেন তখন ওয়াসিম ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ধারার ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী ড্যাশিং হিরো। অভিনয় করেছেন দেড় শ’র বেশি চলচ্চিত্রে।

যদিও ববিতার বিপরীতে নায়ক ভূমিকায় তার চলচ্চিত্রে আগমন কিন্তু তার অধিকাংশ ছবির নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া ও অঞ্জু ঘোষ। তবে কিংবদন্তি নায়িকা শাবানার সঙ্গে ‘রাজ দুলারী’তে ওয়াসিমের অভিনয় দর্শকদের দারুণভাবে মুগ্ধ করেছিল। ওয়াসিম ছিলেন ঘোড়া চালানোয় পারদর্শী। তাই তার ফোক সিনেমাতে ঘোড়ায় চড়ার একটা দৃশ্য থাকতোই।

তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিম নেমে ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজনায়। কিন্তু, এখানে একদম ফ্লপ।

ওয়াসিমকে বলা হতো বাংলা ফ্যান্টাসি সিনেমার রাজকুমার। কিন্তু, রাজকুমারের জীবনে হঠাৎ নেমে আসে অন্ধকার। ২০০০ সালে তার স্ত্রী অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার কয়েক বছর পর তার একমাত্র কন্যা বুশরা আহমেদ মাত্র ১৪ বছর বয়সে আত্মহত্যা করে। শোকে বিহ্বল ওয়াসিম চলচ্চিত্র ছেড়ে হয়ে পড়েন ঘরকুনো। একমাত্র ছেলে দেওয়ান ফারদিন থাকেন যুক্তরাজ্যে। একাকীত্ব পেয়ে বসে রাজকুমারকে। নিজেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে যান তিনি।

গত কিছুদিন যাবৎ মিডিয়াতে খবর আসা শুরু হলো ওয়াসিম অসুস্থ। চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি যে তার মেয়ে বুশরার কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন তা তখনও আঁচ করা যায়নি। বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে কবরী চলে যাওয়ার শোকে যখন জাতি স্তব্ধ তখনই বাংলা চলচ্চিত্রের রাজকুমার তার ঘোড়া ছুটিয়ে চললেন অসীমের পানে। এবার আর দর্শকরা করতালি দিচ্ছেন না, ফেলছেন চোখের জল।

আরও পড়ুন:

নায়ক ওয়াসিম মারা গেছেন

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

10h ago