যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিপদে ভারত
ভারতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির কাঁচামাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।
আজ মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল হেরাল্ডের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু কাঁচামালের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। গতকাল সোমবার সেই অনুরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস।
গতকাল দুই বার এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। প্রথমবার সকালে হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ ব্রিফিংয়ে এবং দ্বিতীয়বার প্রেসসচিব জেন পিসাকির সংবাদ সম্মেলনে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের বলছে, বাইডেন প্রশাসন কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের রপ্তানি ঠেকিয়ে রেখেছে। তারা ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অনুরোধ করেছেন এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য।
গতকাল সকালে হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ রেসপন্স টিমের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আমি জানতে চাই কোন কাঁচামালগুলোর কথা বলা হচ্ছে? আপনাদের কি কোনো পরিকল্পনা আছে, সেরামের বিষয়টি সমাধান করার?।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক ব্যাধি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফাউচি ও হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ রেসপন্স দলের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. অ্যান্ডি স্ল্যাসিট জানান, তাদের কাছে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
ফাউচি বলেন, ‘দুঃখিত, আমি জানি না। আমি নিশ্চিত যে আমরা পরে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব। কিন্তু, এ মুহূর্তে আপনাকে জানানোর মতো কোনো তথ্য নেই।’
স্ল্যাসিট বলেন, ‘আপনাকে পরে উত্তর জানাচ্ছি। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখবেন যে আমরা মহামারির বৈশ্বিক হুমকিগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। আমরা কোভ্যাক্সের তহবিল জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছি, আমরা অসংখ্য দ্বিপাক্ষিক ভ্যাকসিন স্থানান্তরে অংশ নিয়েছি এবং আমরা খুব ভালো করে ও গুরুত্ব সহকারে এসব জটিল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। নির্দিষ্ট তথ্যসহ আমরা পরে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো।’
পিসাকির সংবাদ সম্মেলনের সময়ও একই ধরনের আরেকটি প্রশ্ন করা হয়।
একজন সাংবাদিক পিসাকির বাছে জানতে চান, ‘ভারত ভ্যাকসিন বানানোর কাঁচামালের অভাবজনিত জটিলতায় ভুগছে। তাদের কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করছে এসব কাঁচামাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাগুলো উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। ভারতে আমার সহকর্মীরা আজ রিপোর্ট করেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি ভারতকে জানিয়েছে যে তাদের অনুরোধটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো দ্রুততম সময়ে করা হবে। আপনি কি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন অথবা সময়সীমার বিষয়ে বলবেন?।’
উত্তরে পিসাকি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দেওয়া মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন টাইয়ের একটি বক্তব্যের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মাঝে ভ্যাকসিনের প্রাপ্তি সংক্রান্ত অসমতাগুলো একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সংকটের মুখে ভিন্নধর্মী নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও সৃজনশীলতা প্রয়োজন।’
‘আমরা অবশ্যই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মিলে কোভিডের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। আলোচ্য সূচিতে রয়েছে বেশ কিছু ইস্যু। যেমন: কোভ্যাক্স প্রকল্পে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অথবা কীভাবে আমরা সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্য করতে পারি, তা নির্ধারণ করা।’
‘তবে, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে কার্যকর কর্মপন্থা খুঁজে বের করা। আমাদের হাতে পরবর্তী কাজের তালিকা অথবা নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। কিন্তু, আমরা অনেকগুলো বিকল্প নিয়ে কাজ করছি’, যোগ করেন পিসাকি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ নামে ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। তারা দৈনিক ২০ লাখ ডোজের বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। এই প্রতিষ্ঠানটিই বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে। কিন্তু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশটি ভ্যাকসিন রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহে দেরি করায় ইতোমধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউটকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। চলমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে কাঁচামাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছে সেরাম।
আরও পড়ুন:
ভ্যাকসিন সরবরাহে দেরি, সেরামকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আইনি নোটিশ
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আমদানি ও বিতরণের অনুমতি পেল বেক্সিমকো
‘কোভিশিল্ড’ উৎপাদনের ৯ মাস পর্যন্ত ব্যবহারের অনুমোদন
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষা নিশ্চিত করে?
ভ্যাকসিন নিলেও করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে?
ভারতে করোনার নতুন স্ট্রেইন, বাংলাদেশে সতর্কতা জরুরি
৪ সপ্তাহের পার্থক্যে দ্বিতীয় ডোজে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৫৩ শতাংশ, ১২ সপ্তাহে ৮৩ শতাংশ
ভ্যাকসিন নেওয়া এবং না নেওয়া, মানুষ চিহ্নিত হবে দুই দলে
করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয় না বাংলাদেশের পিসিআর পরীক্ষায়
মত-দ্বিমত ‘করোনাভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সম্ভাবনা নেই?’
Comments