সুপারস্টার ওয়াসিমকে কত সহজেই ভুলে গেছি আমরা: রোজিনা
একসঙ্গে জুটি হয়ে ৭৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন ওয়াসিম-রোজিনা। যখন একসাথে সিনেমা করার কথা হচ্ছিলো তখন সুপারস্টার ছিলেন ওয়াসিম। তার সঙ্গে অভিনয় করা একজন নায়িকার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। আর তখনকার নবাগত নায়িকা রোজিনার নায়িকা হিসেবে অভিষেক এই সুপারস্টার নায়কের বিপরীতেই।
“রাজমহল” সিনেমায় ওয়াসিমের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়, সুপারডুপার হিট হয়। এই বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রোজিনা আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘“রাজমহল” সিনেমায় প্রথম নায়িকা হিসেবে অভিনয় করি এই সুপারস্টারের বিপরীতে। তাদের অভিনয় জনপ্রিয়তা দেখেই আমার সিনেমায় আসা। শুটিংয়ের আগের রাতে চোখে ঘুম নেই। কী হয় কী হয় এই ভেবে! এফডিসির ৪ নম্বর ফ্লোরে শুটিং হবে। আমি অনেক সকালেই সেটে উপস্থিত। তার কিছুক্ষণ পর এলেন তিনি। আমার বুক ধুকধুক হওয়া শুরু হলো। কিন্তু আসার পরে কথা বলার সময়, শুটিংয়ে বুঝতেই দেননি একজন সুপারস্টার নায়ক তিনি। সবকিছু সহজ করে নিয়েছিলেন। কোনো অহংকার দেখিনি তার মধ্যে। প্রথম সিনেমা হিট করার পর আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি। ওয়াসিম -রোজিনা জুটি হয়ে গেল দর্শকের প্রথম পছন্দ। আ্যাকশন, ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক, সামাজিক সব ধরনের সিনেমায় আমাদের চাহিদা ছিল। রাজমহল ছাড়া মানসী, বিনি সুতার মালা, ভাগ্যলিপি, মায়ের আঁচলসহ কতো কতো ছবিতে অভিনয় করেছি জুটি হয়ে।'
তিনি আরও বলেন, 'শুটিংয়ের বাইরে কোথাও আড্ডা দিতে যেতে দেখিনি ওয়াসিম ভাইকে। আমরা অনেকেই যেমন একজন অন্যজনের বাসায় যেতাম, পার্টি করতাম। যেমন রাজ্জাক ভাই, ফারুক ভাই, সোহেল রানা, আলমগীর ভাই, ববিতা আপা, সুজাতা আপাসহ অনেকের বাড়িতে যেতাম। বিভিন্ন পার্টিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতাম। কিন্তু ওয়াসিম ভাই সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। শুটিং আর বাসা ছাড়া কোথাও যেতে দেখিনি তাকে।'
'মানসী' খ্যাত অভিনেত্রী আরও বলেন, 'আমাদের জুটির সিনেমার গান এই প্রজন্মের অনেকেরই প্রিয়। যেমন 'এই মন তোমাকে দিলাম' গানটা নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে আজও দেখি ভালোলাগার। আমাদের দুজনার 'বিনিসুতোর মালা' সিনেমার কথা আজও মানুষের মনের ভেতর জায়গা নিয়ে আছে। চলচ্চিত্রের মানুষ তাকে মনে না রাখলেও দর্শকের কাছে বেঁচে থাকবেন তিনি।'
সুপারস্টার ওয়াসিমের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়া বিষয়ে রোজিনা বলেন, 'এটা সত্যি মন খারাপ করার মতো ঘটনা। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি। পুরস্কার না পেলেও অনেক জনপ্রিয়তা, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। বেঁচে থাকলে হয়তো জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেতেন ওয়াসিম ভাই। তবে দেরি হয়ে গেল খুব। তিনি মারা গেলেন। আমাদের মিডিয়া সেইভাবে সাপোর্ট দেননি তাকে। একজন সুপারস্টার নায়ককে এইভাবে কত সহজেই ভুলে গেছি আমরা। তার মেয়ের মৃত্যুর পর নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন ওয়াসিম ভাই। আর কিছু অভিমান তো থাকেই মানুষের। মানুষতো!'
কথাগুলো বলতে বলতে ফোনের ওপাশে নীরবতা নেমে আসে। অভিনেত্রী রোজিনা চুপ হয়ে যান। নীরবতা এড়িয়ে জানতে চাই শেষ দেখা হয়েছিল কবে নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে?
রোজিনা নীরবতা ভেঙে বলেন, ওয়াসিম ভাইয়ের সাথে 'শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শেষ দেখা হয়েছিল এফডিসিতে। আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম সেদিন। তার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যাওয়া হয়নি। তারপরে একবার মাত্র ফোনে কথা হয়েছিল শিল্পী সমিতির পিকনিকে যাওয়ার বিষয়ে। যেতে রাজী হননি। তারপর আর কথা হয়নি ওয়াসিম ভাইয়ের সাথে। এখনতো চলেই গেলেন। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে কয়েকদিন থেকে।'
Comments