বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় রাশিয়া

বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ‘স্পুতনিক ভি’ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার অথবা স্থানীয়ভাবে তৈরিতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ‘স্পুতনিক ভি’ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার অথবা স্থানীয়ভাবে তৈরিতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।

রাশিয়ার ভ্যাকসিন সহায়তা প্রস্তাবের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাশিয়া সরকার বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা অথবা একই পরিমাণ ভ্যাকসিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তারা ভ্যাকসিনগুলো সরবরাহ করতে চায়।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ ছাড়া রাশিয়া সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে কয়েক ধাপে আরও সাড়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনারও প্রস্তাব দিয়েছে।’

‘তারা ভ্যাকসিন রপ্তানি অথবা স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে সহায়তা দিতেও আগ্রহী’, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ কি এই বিশাল পরিমাণ ভ্যাকসিনের উৎপাদনে যেতে সক্ষম, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, তারা দেশের একাধিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে দেখেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিমাণ ভ্যাকসিনের উৎপাদনে যেতে সক্ষম।

‘আমরা রাশিয়ার এই প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। এ ছাড়া এখনো পর্যন্ত আমরা এই প্রস্তাবের শর্ত, মূল্য ও শিপমেন্টের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি’, বলেন তিনি।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান আসার অনিশ্চয়তার মধ্যেই রাশিয়া থেকে এই প্রস্তাব এলো।

বাংলাদেশে ছয় ধাপে মোট তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য চুক্তি করে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। তবে, সেই ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় দেশে চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে ভ্যাকসিনের বিভিন্ন বিকল্প উৎসের সন্ধান শুরু করে সরকার।

গত বছরের আগস্ট থেকে রাশিয়া সরকার তাদের দেশে স্পুতনিক ভি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। এরপর থেকে সেখানে স্পুতনিক ভি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে ভ্যাকসিন সংকটের কারণে ভারত সরকারও তাদের দেশে স্পুতনিক ভি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাশিয়া ছাড়াও স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার কাছ থেকে ভ্যাকসিন আমদানির জন্যে আলোচনা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন দরকার। আমরা যদি ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে চাই, তাহলে আমাদের ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দরকার। এমনকি একবার করে ভ্যাকসিন দিতে হলেও অন্তত ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দরকার। সরকারি পর্যায়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করে অথবা বেসরকারিভাবে এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা সম্ভব।’

সরকার সেরামের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছিল স্থানীয় এজেন্ট বেক্সিমকোর মাধ্যমে। চুক্তি অনুসারে, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু, গতকাল পর্যন্ত দুই দফায় মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে সরকার।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন রপ্তানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত।

সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সরকার-পরিচালিত বার্তাসংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার দেওয়া প্রস্তাবের কথাটি জানান।

তিনি বলেন, ‘দেশের স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালসগুলোর সঙ্গে স্পুতনিক ভি ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।’

‘আমরা রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি..., তবে এখনো পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি’, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাব অনুযায়ী রাশিয়া সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেবে এবং বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো এখানে ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে।’

‘যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন খরচ অনেক কম হবে এবং সেটা আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে’, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরও পড়ুন:

টিকার বিকল্প উৎস সন্ধানে বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে ৬০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় চীনের সিনোফার্ম

ভারত সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারছে না সেরাম

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়ায় অনিশ্চয়তা: অন্য উৎস খুঁজছে সরকার

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago