মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটে আকাশচুম্বী ভাড়া, বিপাকে প্রবাসী শ্রমিক

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ফ্লাইটের ভাড়া গত কয়েক মাসে বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে করে কর্মস্থলে ফিরতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের।
ফাইল ছবি/ শাদমান আল সামি

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ফ্লাইটের ভাড়া গত কয়েক মাসে বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে করে কর্মস্থলে ফিরতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের।

রিক্রুটিং অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানিয়েছেন, এক বছর আগে সৌদি আরবগামী ফ্লাইটের টিকিটের দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটিতে যেতে শ্রমিকদের ৯০ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সৌদি আরবগামী শ্রমিকদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক লাখ ১০ হাজার টাকা বা তারচেয়েও বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) তথ্য অনুসারে, গত বছর ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের ভাড়া ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। এ বছর ভাড়া বেড়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় পৌঁছেছে।

তবে ভারতের কিছু শহর থেকে এসব দেশের উড়োজাহাজ ভাড়া হাতের নাগালেই রয়েছে।

বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ফখরুল ইসলাম জানান, কলকাতা থেকে রিয়াদের টিকিট প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা এবং মুম্বাই থেকে দুবাইয়ের টিকিট প্রায় ১৭ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া নেপালি প্রবাসী শ্রমিককে রিয়াদের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং দুবাইয়ের জন্য ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা থেকে রিয়াদ যেতে ভাড়া দিতে হয় ৩৯ হাজার থেকে ৪৩ হাজার টাকা।

টিপু ও ফখরুল বলেন, আকাশচুম্বী ভাড়ার কারণে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রম বাজার হারাচ্ছে।

বায়রা ও আটাব- দুটো সংগঠনের নেতারাই জানান, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লাগলেও সেখানকার ফ্লাইটের ভাড়া ৬৫ হাজার টাকার বেশি নয়। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে যেতে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মতো লাগলেও সেখানকার টিকিটের দাম অনেক বেশি।

আটাবের সভাপতি মনসুর আহমেদ কালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকার ও সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

গত ১৭ এপ্রিল থেকে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট চালু করা হয়। যাত্রী সংখ্যার ব্যাপারে বিধি-নিষেধের কড়াকড়ি শিথিল এবং অন্যান্য খরচ নির্ধারণ করে দেওয়ায় ১৭ এপ্রিলের আগেই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনগুলোকে টিকিটের দাম স্বাভাবিক নিয়মে রাখার অনুরোধ করে চিঠি দেয় ক্যাব।

টিকিটের অতিরিক্ত দাম সম্পর্কে ক্যাবের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখব।’

চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে এই বাড়তি দামের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ক্যাবের বিধি-নিষেধের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই তার কোম্পানিকে টিকিটের দাম বাড়াতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘৪১৫ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বিশাল একটা বিমানে মাত্র ২৬০ জন যাত্রী নিতে পারি আমরা। এছাড়া, ফিরে আসার সময় খুব কম যাত্রী পাই। খরচ না উঠলে কীভাবে ফ্লাইট চালাবো?’

এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য সৌদি এয়ারলাইন্সের তারিক এ আলোওয়াইদির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সৌদিগামী কয়েকজন প্রবাসী জানিয়েছেন, ফ্লাইটের ভাড়া মেটাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের।

আরিফুল হক নামের এক প্রবাসী গত সপ্তাহে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সৌদি আরবের একটা টিকিট কেনার জন্য আমাকে দুই আত্মীয়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার করতে হয়েছে।’

গত ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে দিতে ১৭ এপ্রিল থেকে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে প্রায় ১০০টি বিশেষ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বিমান বাংলাদেশ, ইউএস বাংলা এবং আরও ১০টি বিদেশি এয়ারলাইনকে ওই পাঁচটি দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়।

গত ১১ এপ্রিল সরকার ঘোষণা দেয়, করোনার বিস্তার রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখা হবে। পরে নিষেধাজ্ঞা আরেক দফা বাড়ানো হলে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ ফ্লাইট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ক্যাব।

বায়রা ও আটাবের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ এপ্রিল থেকে নিষেধাজ্ঞার প্রথম সাত দিনে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার কথা।

Comments

The Daily Star  | English

Personal data up for sale online!

A section of government officials are selling citizens’ NID card and phone call details through hundreds of Facebook, Telegram, and WhatsApp groups, the National Telecommunication Monitoring Center has found.

2h ago