দেশে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ৫১, দুর্ঘটনাপ্রবণ ৬৩
সারাদেশে ১১৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দুর্ঘটনার ধরণ ও মাত্রা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৫১টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ৬৩টিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
আজ শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে জানানো হয়, গত দুই বছরব্যাপী গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার স্থানসমূহ পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা:
ঢাকার ধামরাই, বিমানবন্দর সড়ক, হানিফ ফ্লাইওভার, বাড্ডা-কুড়িল সড়ক, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশের মহাসড়ক, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মির্জাপুর, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মাদারীপুরের টেকেরহাট, কালকিনি, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, রাজবাড়ির গোয়ালন্দ-রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের এশিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীগঞ্জ, সরাইল, কক্সবাজারের উখিয়া, বান্দরবানের থানচি, রাজশাহীর পুটিয়া, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশের মহাসড়ক, নাটোরের হাটিকুমরুল, বড়াইগ্রাম, নওগাঁর মান্দা, পাবনার ঈশ্বরদী, সাথিয়া, বগুড়ার শেরপুর, যশোরের অভয়নগর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, সিলেটের ওসমানীনগর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালীর দশমিনা, ভোলার চরফ্যাশন, রংপুরের তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, ময়মনসিংহের ভালুকা, ফুলপুর ও তারাকান্দা।
দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা:
ঢাকার নবাবগঞ্জ, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, শ্রীপুর, টাঙ্গাইলের বাসাইল, ভুয়াপুর, সখীপুর, নাগরপুর, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, ভৈরব, ফরিদপুরের মধুখালী, মাদারীপুরের শিবচর, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, তারাব, নরসিংদীর মনোহরদী, পলাশবাড়ী, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, গজারিয়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু, মিরেরসরাই, সাতকানিয়া, কুমিল্লার দেবিদ্বার, চৌদ্দগ্রাম, দাউদকান্দি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, বান্দরবানের লামা, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রাজশাহীর বাঘা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নাটোরের লালপুর, পাবনার চাটমোহর, বগুড়ার শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া, রূপসা, যশোরের কেশবপুর, মাগুরার মহম্মদপুর, কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা, সিলেটের জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বরিশালের বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বাউফল, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া, বরগুনার আমতলী, রংপুরের-বদরগঞ্জ, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা, দিনাজপুরের বিরল, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও নান্দাইল।
দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হওয়ার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, এলাকার সড়কের নকশা ও অবকাঠামোগত ত্রুটি, সড়কের পারিপার্শ্বিক বিরূপ অবস্থা, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা না থাকা বা ঘাটতি (সাইন, মার্কিং, সড়ক বিভাজক, পূর্ব সতর্কতামূলক নির্দেশনা বোর্ড ইত্যাদি না থাকা), যানবাহনের উচ্চগতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকা, একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বাধাহীন ও বেপরোয়া চলাচল, সড়কের সমস্যাক্রান্ত স্থানে যানবাহন চালনার ক্ষেত্রে চালকদের সক্ষমতার অভাব বা অদক্ষতা, সড়ক পার্শ্ববর্তী বা সড়ক ঘেষা জনবসতির মানসিকতা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশ, সড়কের যেসব স্থানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব স্থানের নকশা ও অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘাটতি নিরসন করা, যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, একই সড়কে নানা ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধে সার্ভিস লেন অথবা সড়ক বিভাজক তৈরি করা, এলাকার অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চালানো বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সড়ক পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয় সচেতনতা সৃষ্টি করা, দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানসমূহ সড়কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির আওতায় নিয়ে আনা।
দেশের ১১৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ৪৬টি জেলার অন্তর্গত। এই ১১৪টি এলাকার বাইরেও দুর্ঘটনা ঘটছে, তবে তা প্রতিনিয়ত নয়। অনুরূপভাবে ৪৬ জেলার বাইরে অন্যান্য জেলাতেও দুর্ঘটনা ঘটছে মাঝে মধ্যে। মূলত যেসব এলাকায় ধারাবাহিকভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে সেসব এলাকাকে বিবেচনায় নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
Comments