হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট: দিল্লিতে ২৫, পাঞ্জাবে ৬ রোগীর মৃত্যু

INDIA-HOSPITAL.jpg
ভারতের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ছবি: রয়টার্স

গত কয়েকদিনে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহামারি মোকাবিলায় এটাই এখন ভারতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এনডিটিভি জানায়, গতকাল শুক্রবার দিল্লির জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে ২৫ জন করোনা রোগী অক্সিজেন সংকটের কারণে মারা গেছেন।

শনিবার সকালে অক্সিজেন সংকটের কারণে পাঞ্জাবের অমৃতসরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছয় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

দিল্লির জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ডিকে বালুজা বলেন, ‘সরকার আমাদের ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন বরাদ্দ দিয়েছিল। গতকাল বিকেল ৫টা নাগাদ সেটি আমাদের কাছে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু সেটি পৌঁছেছে মধ্যরাতের দিকে। ততক্ষণে অক্সিজেনের অভাবে আমাদের ২৫ জন রোগী মারা গেছেন।’

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কমপক্ষে ২১৫ জন করোনা রোগীর অবস্থা গুরুতর, জরুরিভিত্তিতে তাদের অক্সিজেন প্রয়োজন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহায্যের জন্য দিল্লি হাইকোর্টে পর্যন্ত যোগাযোগ করেছে। জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালের আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের হাসপাতালে আগামী কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্র্যাজেডি দেখা দেবে। আমরা ইতোমধ্যে ২৫ জনের প্রাণ হারিয়েছি। আমরা অক্সিজেন খুঁজে হাঁপিয়ে যাচ্ছি। দয়া করে জীবন বাঁচান।’

এর আগে, মুলচাঁদ হাসপাতালের পক্ষ থেকেও এক টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও লেফটেনেন্ট গভর্নর অনিল বৈজালকে মেনশন করে জরুরি সাহায্যের আবেদন জানানো হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৩০ জনেরও বেশি কোভিড রোগী বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে আছেন। হাসপাতালে দুই ঘণ্টারও কম সময় অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। সংকটের মধ্যে হাসপাতালটি নতুন রোগী ভর্তি করা বন্ধ করে দিয়েছে।

টুইটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আমরা মরিয়া হয়ে সমস্ত নোডাল অফিসারের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, তবে সংযোগ পাচ্ছি না।’

মুলচাঁদ হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর মধু হান্দা এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলার সময় পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে প্রায় ৩০ মিনিটেরও কম সময়ের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ আছে। নোডাল অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। তবে আমার মনে হয়, অন্যান্য হাসপাতালও এ ধরনের সংকটে পড়েছে। সুতরাং তাদের এখন ঠিক করতে হবে, তারা কোন হাসপাতালকে অগ্রাধিকার দেবেন।’

এদিকে, অক্সিজেন সংকটে আজ সকালে পাঞ্জাবের অমৃতসরের নীলকান্ত মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে ছয় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ভেন্টিলেটরে অক্সিজেন শেষ হওয়ার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নীলকান্তের হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. সুনীল দেবগন বলেন, ‘আমরা রাজ্য সরকারকে বার বার আবেদন পাঠাচ্ছি। যেসব হাসপাতালে কোভিড রোগী নেই, সেখানে অক্সিজেনের সরবরাহ উদ্বৃত্ত রয়েছে। এদিকে, গত ৪৮ ঘণ্টায় আমাদের সমস্ত অক্সিজেন ব্যবহার হয়ে গেছে। যতদূর যোগাযোগ করা সম্ভব প্রত্যেকদের কাছে সাহায্য চেয়েছি। সরকার যদি সাহায্য করতে না চায়, তাহলে কি বেসরকারি হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত? আমরা কোথায় যাব?’

এ প্রসঙ্গে পাঞ্জাবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলবীর সিং সিধু জানান, রোগীদের মৃত্যুর তদন্ত করা হবে। এ ছাড়াও, যারা মেডিকেল অক্সিজেনের অবৈধ ব্যবসায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

গত তিন দিন ধরে ভারতে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকটের পাশাপাশি অক্সিজেন ও ওষুধের সংকট শুরু হয়েছে। দিল্লিতে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অতিরিক্ত রোগীর চাপে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। অনেকেই সাহায্যের জন্য দিল্লি হাইকোর্টে যোগাযোগ করেছেন।

আজ শনিবার দিল্লি হাইকোর্ট একটি বেসরকারি হাসপাতালের করা আবেদনের শুনানিতে জানিয়েছেন, ভারতের কেন্দ্র, রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা যদি অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয়, তবে তাকে ‘ফাঁসি’ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:

অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দিলে 'ফাঁসি': দিল্লি হাইকোর্ট

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

7h ago