অবিক্রিত কেরু’র হ্যান্ড স্যানিটাইজার
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ডিস্ট্রিলারি প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। তবে সেই সময়ে উৎপাদিত স্যানিটাইজারের ৬০ হাজার বোতল এখনো বিক্রি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার পর গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এরপর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে এক কোটি দুই লাখ টাকা মুনাফাও করে প্রতিষ্ঠানটি।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশের) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ‘বাজারে অন্যান্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের স্যানিটাইজারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কেরুর স্যানিটাইজারের চাহিদা কমতে শুরু করে।’
গত বছরের জুনে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এক লাখ বোতল স্যানিটাইজার উৎপাদন করে। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত (নয় মাসে) মাত্র ৪০ হাজার বোতল বিক্রি হয়েছে।
এর জন্য বিপণন ব্যবস্থাকে দায়ী করেন আবু সাঈদ। তিনি বলেন, ‘যথাযথ মার্কেটিংয়ের অভাব এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় স্যানিটাইজারের বিক্রি কমে গেছে।’
স্যানিটাইজার তৈরির মূল উপাদান স্পিরিট বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে কেরুর। স্পিরিটের সঙ্গে ডিস্টিল্ড ওয়াটার, রঙ ও সুগন্ধি মিশিয়ে স্যানিটাইজার তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের ১৩টি গুদাম ও তিনটি আউটলেট থেকে এসব স্যানিটাইজার বিক্রি করে কেরু।
সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে আবারও বেড়েছে স্যানিটাইজারের চাহিদা।
তবে স্যানিটাইজার বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।
নিয়মিত স্যানিটাইজার ব্যবহারকারী শাহান শাহরিয়র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা যেসব স্যানিটাইজার ব্যবহার করি তার মধ্যে কেরুর স্যানিটাইজার বেশ কার্যকর এবং দামেও সস্তা। এর আগে একবার মতিঝিলের সুগার করপোরেশনের অফিস থেকে দুই বোতল সংগ্রহ করেছিলাম। এরপর আর কোথাও এটা পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির জন্য এটা একটা লাভজনক ব্যবসা। এছাড়া কম দামে স্যানিটাইজার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের সহায়তাও করতে পারে। কেরুর উচিত স্যানিটাইজারটি সহজলভ্য করা।’
‘বর্তমানে যেখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্যানিটাইজার হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে কেরুর স্যানিটাইজার কিনতে হলে ক্রেতাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলতে পারেন না,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মাজহার-উল-হক খান বলেন, ‘যারা আমাদের পণ্য সম্পর্কে জানে, শুধু তারাই আমাদের স্যানিটাইজার কিনছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত, পণ্যটি কীভাবে বিক্রি করা হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে বিক্রি কম হচ্ছে।’
মাজহার-উল-হক খান জানান, স্যানিটাইজার বিক্রির বিষয়ে তিনি অনলাইন শপ ও খাদ্য দ্রব্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে পণ্যটির ব্যাপারে কেউই খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।
নতুন ব্যাচের হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে নতুন মোড়ক ব্যবহার করা হবে এবং বিপণনে গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোম্পানির বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব করা হবে, ১০০ মিলিলিটারের নতুন মোড়কে স্যানিটাইজার উৎপাদন করে ১২০ টাকা দামে বিক্রির জন্য।’
বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার রয়েছে। যদি স্প্রে বোতলে নতুন স্যানিটাইজার বাজারজাত করা হয় তাহলে এটা মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে।’
কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘তারা প্রথমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে অবিক্রিত স্যানিটাইজারগুলো বিক্রি করবে।’
Comments