পুলিশের প্রাথমিক ধারণা তরুণীর ‘আত্মহত্যা’য় কারও প্ররোচনা ছিল: উপকমিশনার

গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-গুলশান বিভাগ) সুদীপ চক্রবর্তী জানান, তরুণীর আত্মহত্যায় কারও প্ররোচনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-গুলশান বিভাগ) সুদীপ চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-গুলশান বিভাগ) সুদীপ চক্রবর্তী জানান, তরুণীর আত্মহত্যায় কারও প্ররোচনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

পুলিশ ওই তরুণীর ছয়টি ডায়রি জব্দ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা অনেক সময় দেখেছি অনেক আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি তার হতাশার কথা ব্যক্ত করে সুইসাইড নোট লিখে রাখেন। ডায়রিতে তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন, সম্পর্কের স্বীকৃতির বিষয়গুলো আমরা লক্ষ্য করেছি। সরাসরি সুইসাইডাল নোট যেভাবে থাকে, এখানে সেভাবে নেই।'

'তবে, বিভিন্ন দিনের ঘটনাপ্রবাহে তার আনন্দ বা দুঃখ সবই এখানে প্রতিফলিত আছে। ছয়টি ডায়রিকেই আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। তার ভেতরে মানসিক যে দ্বন্দ্ব, তা পর্যালোচনা করে দেখছি। সরাসরি সুইসাইডাল নোট না বললেও, তার মানসিক কষ্ট বা হতাশা সেগুলো এখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আমরা মনে করছি, এগুলোর অনেক কিছুই আমাদের তদন্তে প্রাসঙ্গিক হবে এবং এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তে আমাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে,' বলেন উপকমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, 'আমরা হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট দিয়ে ডায়রিগুলো পরীক্ষা করাব। আমরা ভুক্তভোগীর বিভিন্ন ডিভাইস, সেল ফোন, বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অভিযুক্তের ওই বাসায় গমনাগমনের তথ্য ও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।'

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'এছাড়া অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে একটি অডিও রেকর্ড এসেছে। এটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যে পরিপ্রেক্ষিতে তার মধ্যে প্রচণ্ড মানসিক বিপর্যস্ততার কারণে সে আত্মহত্যার মতো একটি পরিণতি বেছে নেয়, এ ক্ষেত্রে অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে আরেকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে, সকালে সে তার বোনকে জানিয়েছে, "যে কোনও কিছু হয়ে যেতে পারে"। তার মানে সে কিন্তু একটা ইঙ্গিত দিয়েছে। সেই কনভারসেশনও আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।'

'আমরা যে বিষয়টা নিরূপণ করতে চাই, তাদের সম্পর্ক নিয়ে অভিযুক্তের পরিবারের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব এবং এর কারণে হতাশার জন্য সে যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল, এই বিষয়গুলোকে সংজ্ঞায়িত করা প্রতিষ্ঠা করা বা সাক্ষ্যপ্রমাণ করার নিরিখে আরও যে সব সাক্ষ্যপ্রমাণ দরকার সেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি,' যোগ করেন তিনি।

আসামির বিরুদ্ধে যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে কি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, 'অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটা দালিলিক সাক্ষ্য, বস্তুগত সাক্ষ্য, ডিজিটাল সাক্ষ্য- এই তিন ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে অভিযোগ এসেছে আত্মহত্যার প্ররোচনা, সেটাকে আমরা যদি প্রমাণ করতে চাই, আমাদের ঘটনাপ্রবাহ মাথায় রাখতে হবে। ভুক্তভোগীর সঙ্গে অভিযুক্তের ও তার পরিবারের সম্পর্কের যে টানাপড়েনের কথা বলা হচ্ছে বা কি কারণে তাকে এ ধরনের হতাশ করে ফেলা হলো বা এখানে আর কারা কারা ভূমিকা রেখেছে প্রতিটা বিষয় আমরা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পুলিশের তৎপরতার কারণেই কিন্তু মামলাটি এ পর্যায়ে এসেছে। এ মামলাটি কিন্তু অপমৃত্যু মামলা হতে পারতো। কিন্তু, আমরা যখন সেখানে গিয়ে দেখেছি অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর ছবি দেয়ালে টাঙানো, তার ডায়রিতে মনঃকষ্টের বিষয়গুলো, এসব দেখে কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে যে একটা প্রতিশ্রুতিশীল মেয়ে কোনও প্ররোচনা ছাড় আত্মহত্যা করতে পারে না। ওই রাতেই আমরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি, তা থেকে আমাদের মনে হয়েছে যে এই আত্মহত্যার পেছনে নিশ্চয়ই প্ররোচনা আছে। তাৎক্ষণিক যে সাক্ষ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতেই আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা হয়েছে।'

তিনি বলেন, যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ময়নাতদন্ত করেছেন, যিনি ভিসেরা সংরক্ষণ করেছেন, যিনি ডিএনএ প্রোফাইলিং করছেন, বা ফরেনসিক করবেন তাদের মতামত সাপেক্ষেই আমরা বলতে পারবো এটি আত্মহত্যা কিনা।

আরও পড়ুন-

আরও পড়ুন:

‘গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আছে কলেজশিক্ষার্থীর ডায়েরিতে’

বসুন্ধরা এমডির আগাম জামিন শুনানি হচ্ছে না

আগাম জামিন আবেদন করলেন সায়েম সোবহান আনভীর

বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

গুলশানে ফ্ল্যাট থেকে কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago