বার্সার শিরোপার স্বপ্নে জোর ধাক্কা দিল গ্রানাদা
স্প্যানিশ লা লিগায় ২৫তম বারের মতো বার্সেলোনার আতিথ্য নিতে এসেছিল গ্রানাদা। আগের ২৪ ম্যাচে কোনো পয়েন্টই পায়নি তারা। সবকটিতে হেরেছিল দলটি। সেই তারাই কিনা লিওনেল মেসির গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে তুলে নিল স্মরণীয় এক জয়! অঘটনের শিকার হওয়ায় বার্সার শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নে লাগল জোর ধাক্কা।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে গ্রানাদার কাছে ২-১ গোলে হেরেছে রোনাল্ড কোমানের শিষ্যরা। অথচ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠার সুযোগ ছিল তাদের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধে ডারউইন মাচিসের গোলে সমতায় ফেরে অতিথিরা। জয়সূচক গোলটি করেন বদলি নামা ৩৯ বছর বয়সী স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হোর্হে মোলিনা।
শুরু থেকে বরাবরের মতো বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে বার্সা। বিরতির পরও একই ধারায় খেলতে থাকে তারা। কিন্তু আক্রমণে তেমন সুবিধা করতে পারেনি তারা। পাশাপাশি তাদের রক্ষণভাগও ছিল নড়বড়ে। বিপরীতে, রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা-আক্রমণে খেলার কৌশল বেছে নিয়ে সফলতা পায় গ্রানাদা।
৩৩ ম্যাচে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে আগের তৃতীয় স্থানেই রইল বার্সেলোনা। মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় দুইয়ে আছে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। শীর্ষে থাকা অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের অর্জন ৭৩ পয়েন্ট। সেভিয়া ৭০ পয়েন্ট নিয়ে আছে চারে। আটে থাকা গ্রানাদার পয়েন্ট ৪৫।
নবম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জর্দি আলবার নেওয়া শট চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। দশ মিনিট পর আঁতোয়ান গ্রিজমানের দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক অ্যারন এস্কান্দেল। সফলতা আসে ২৩তম মিনিটে। মেসির দারুণ লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
সার্জিও বুসকেতস মাঝমাঠের সামনে থেকে খুঁজে নেন মেসিকে। তিনি বল বাড়ান গ্রিজমানকে। পুরো শরীর ঘুরিয়ে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। এরপর ডি-বক্সে ঢুকে বলে একবার ছোঁয়া লাগিয়ে তিনি চকিতে দেখে নেন মেসিকে। পরের ছোঁয়ায় বাঁ দিকে আর্জেন্টাইন সতীর্থের উদ্দেশ্যে বল ঠেলে দেন গ্রিজমান। রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা ততক্ষণে পৌঁছে যান ফাঁকায়। দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ছাড়াই বাঁ পায়ে নিখুঁত কোণাকুণি শট নেন তিনি। বল জড়াল জালে। চলতি আসরে এটি তার ২৬তম গোল।
দুই মিনিট পরই সমতায় ফিরতে পারত গ্রানাদা। বার্সার ডি-বক্সের সামনে বুসকেতসের পা থেকে বল কেড়ে নেন ইয়াঙ্গেল হেরেরা। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। তার দুর্বল শট লক্ষ্যেই থাকেনি।
৩৬তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। সফরকারীদের রক্ষণভাগ তছনছ করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। কিন্তু এস্কান্দেলকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন তিনি। পরের মিনিটে কর্নার থেকে স্যামুয়েল উমতিতির হেডও সহজেই লুফে নেন গ্রানাদার এই গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পরপরই আক্রমণে ওঠে বার্সা। গ্রিজমানের ডান পায়ের শট চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। তিন মিনিট পর অবশ্য জেরার্দ পিকের দৃঢ়তায় গোল হজম করা থেকে বেঁচে যায় তারা। গ্রানাদার স্ট্রাইকার রবার্তো সলদাদোর পাস তিনি আটকে দেওয়ার পর বল বিপদমুক্ত করেন উমতিতি।
৬৩তম মিনিটে সমতায় ফেরে গ্রানাদা। মাঝমাঠ থেকে আসা বলে ঠিকমত পা ছুঁইয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হন অস্কার মিনগেজা। সার্জি রবার্তোকে পেছনে ফেলে তা নিয়ন্ত্রণে নেন মাচিস। এরপর ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ শটে বার্সার গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনকে ফাঁকি দেন ভেনেজুয়েলার এই ফরোয়ার্ড।
কিছুক্ষণ পরই লাল কার্ড দেখানো হয় বার্সার কোচ কোমানকে। ঠিক কী কারণে তাকে ডাগআউট ছাড়তে হয় তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গোল হজমের পর তাকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গিয়েছিল।
৭৯তম মিনিটে বার্সেলোনাকে স্তম্ভিত করে দেয় গ্রানাদা। বাঁ প্রান্ত থেকে আদ্রিয়ান মারিনের ক্রসে ডি-বক্সের ভেতরে দর্শনীয় হেডে জাল খুঁজে নেন মোলিনা। টের স্টেগেনের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। মোলিনার আশেপাশেও ছিলেন না বার্সার কোনো খেলোয়াড়। এরপর মরিয়া ভাব দেখালেও বার্সা পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি গ্রানাদার গোলরক্ষককে।
Comments