পোস্টের কারণে হয়রানি, আদালত বিষয়টিকে অবমাননা হিসেবে গণ্য করবে: ভারতীয় হাইকোর্ট

spreme-court-india-1.jpg
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় উঠেছে। গত দুই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সরকারের তীব্র সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করেছেন।

তবে ‘ভুল তথ্য’ ও ‘আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে’ দাবি করে মোদি সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের পোস্টগুলোকে আটকাতে চেষ্টা করেছে।

আজ শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অভিযোগ জানালে কোনো রাজ্যেরই সেই তথ্য আটকানো উচিত নয়।

এনডিটিভি জানায়, মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে অনেকেই হাসপাতাল শয্যা কিংবা অক্সিজেন না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও মেডিকেল সরঞ্জামের অভাবের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে।

শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসা অভিযোগগুলোকে মিথ্যা বলে মনে করা উচিত নয়। এ কারণে যদি কোনো নাগরিককে হয়রানি করা হয়, তবে তা অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হবে।’

বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘এটি একজন নাগরিক কিংবা একজন বিচারক হিসেবেও আমার কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। নাগরিকরা যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অভিযোগ জানায়, তবে সেই তথ্যে বাধা দেওয়া হোক, এটা কখনোই কাম্য নয়। তাদের কণ্ঠস্বর আমাদেরকে শুনতে দিন। কোনো নাগরিককে যদি অক্সিজেন বা হাসপাতাল শয্যা চেয়ে পোস্ট দেওয়ার কারণে হয়রানি করা হয়, আদালত সেটিকে অবমাননা বলে গণ্য করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই মানবিক সংকটে আছি। এমনকি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও বেড পাচ্ছেন না।’

গত দুই সপ্তাহে হাসপাতাল শয্যা বা অক্সিজেন না পেয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন। ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সরকারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই সরাসরি নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ দাবি করে পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক হারে #ModiMadeDisaster, #ResignModi ও #ModiFailsIndia এই হ্যাশট্যাগগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। 

গত সপ্তাহে টুইটারকে ডজনখানেকেরও বেশি টুইট সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে ভারত সরকার। ওই টুইটগুলোতে ভারতের কোভিড-১৯ মহামারি সামাল দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন স্থানীয় আইনপ্রণেতা, রাজনীতিবিদ ও চলচ্চিত্র নির্মাতাসহ অনেকেই।

অনুরোধে সাড়া দিয়ে টুইটার জানায়, ভারত থেকে ওই টুইটগুলো আড়াল করে দেওয়া হয়েছে।

ফেসবুক থেকেও এই হ্যাশট্যাগগুলো কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। ফেসবুক জানায়, ভারত সরকারের অনুরোধে পোস্টগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে তা ফিরিয়ে আনা হয়।

ভারত সরকার ‘ভুল তথ্য’ ও ‘আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে’ দাবি করে পোস্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তবে, বিরোধীদলের নেতারা বলছেন, মূলত সরকারের সমালোচনা ও মতবিরোধকে দমন করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ভারতের ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় টুইটার, ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের কাছে একটি আদেশ জারি করে ১০০টি পোস্ট সরিয়ে নিতে বলে।

এই আদেশটি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ এ ধারার অধীনে জারি করা হয়। ২০০৮ সালে পাস হওয়া এই সংশোধিত আইনটিতে সরকার সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও জাতীয় স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiya Party central office vandalised, library set on fire in Kakrail

Protesters linked to Gono Odhikar Parishad demand ban on JP, accuse it of siding with Awami League

3h ago