বিদেশি সহায়তা ব্যবহারে সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা

২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা

বড় অঙ্কের বিদেশি সাহায্য মজুদ থাকায় আগামী অর্থবছরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকার বিদেশি সাহায্য ব্যবহারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

এই অর্থের পরিমাণ ১০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সমান এবং চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তার ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনীতিক মন্দাভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠার জন্য উন্নয়ন সগযোগীরা আরও বেশি অর্থ সহায়তারও আভাস দিয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপির আকার দাঁড়াতে পারে দুই লাখ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির চেয়ে বেশি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বরাদ্দের পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই অর্থের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পরবর্তী এডিপি তৈরি করছিল।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরবর্তী এডিপি চূড়ান্ত হবে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে তোলা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যেহেতু দেশে বিশাল অঙ্কের অব্যবহৃত বিদেশি সাহায্য মজুদ আছে, তাই আসন্ন এডিপিকে সামনে রেখে সরকার বিদেশি সাহায্যের বরাদ্দ বাড়ানোর কথা চিন্তা করছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই ঋণে সুদের পরিমাণ যেহেতু খুব কম, তাই সরকার চাইলে যত ইচ্ছা তত পরিমাণে বিদেশি সাহায্য ব্যয় করতে পারতো।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে বাংলাদেশ বিভিন্ন সহায়তাকারী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রচুর পরিমাণে অর্থ পেতে শুরু করে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে অব্যবহৃত বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল রেকর্ড ৫০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। পরবর্তীতে দাতাদের কাছ থেকে এ ধরনের সাহায্য আরও আসতে থাকায় এই টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে।

গত বুধবার ম্যানিলাভিত্তিক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা মহামারির আর্থ-সামাজিক প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠার জন্য ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশকে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ ও সাত দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। একইসঙ্গে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশকে ৯৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে এডিবি। পাশাপাশি ৫০০ মিলিয়ন ডলারের দুটি প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এডিবি বাংলাদেশের জন্য ১১ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে পারে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন কেনা, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য চলতি ও আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় বিলিয়ন ডলার দিতে পারে। জাপান ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মতো অন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে সরকার এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তায় বরাদ্দ বাড়ালেও মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো তা কমই কাজে লাগাতে পেরেছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে যা ৬৩ হাজার কোটিতে নেমে আসে।

অবশ্য বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া অর্থের ব্যবহার বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই অর্থের পরিামাণ আট বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এটা ছিল প্রাপ্ত মোট সহায়তার ২৮ শতাংশের বেশি।

আসন্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের অবদান এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এডিপি থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৪ হাজার ২০৪ দশমিক ০৪ কোটি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৮ হাজার ১৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পেতে পারে।

বিদ্যুৎ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য যথাক্রমে ২৫ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৬ লাখ, ২০ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ ও ১৩ হাজার ৬১৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে।

আর এডিপি থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বরাদ্দ পাবে ১৩ হাজার ১২৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যদিও বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য খাতের জন্য আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে সামনের বছরগুলোতে বরাদ্দ অবশ্যই বাড়বে। তবে এর আগেও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেনি।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে গত মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের জন্য এডিপি থেকে বরাদ্দের মাত্র ২১ শতাংশ খরচ করেছে। এ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে এডিপি থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ছয় হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তারা কেবল ৬৬৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা খরচ করেছে। যা বরাদ্দের মাত্র ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এ ছাড়া সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে পাঁচ হাজার ৫৩১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা দেওয়া হলেও তারা মাত্র এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে। যা বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই হার সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম।

Comments

The Daily Star  | English

Govt dissolves NBR as per IMF proposal

An ordinance published last night disbands NBR and creates two new divisions

2h ago