প্রাথমিক-মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন আরও এক বছর পেছাল
মহামারির কারণে কর্তৃপক্ষ নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করতে না পারায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত করা হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার পরিকল্পনা করেছিল।
মহামারির কারণে তা পিছিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এটি এখন আরও এক বছর পিছিয়ে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তারা জানান, বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় অংশ নেওয়া একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বইগুলো পাবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
এনসিটিবির চেয়ারপারসন অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব। আমরা সভার রেজুলেশন দেখে ব্যবস্থা নেব।’
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, পাইলট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ২০২২ সালে কয়েকটি বিদ্যালয়ে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির নতুন বই দেওয়া হবে। এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, নতুন বই প্রস্তুত করার সময় তারা যে সমস্যায় পড়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, এতদিনে বইগুলোর সব পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল এবং এনসিটিবির নতুন বইগুলোর মুদ্রণের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল।
‘তবে আমরা নতুন বইগুলো লেখা শেষ করতে পারিনি’, এনসিটিবির এক সদস্য বলেন।
নতুন শিক্ষাক্রম তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে দক্ষতার ওপর জোর দেবে।
একজন শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণির পরে অর্জন করবে এমন ১০টি প্রধান দক্ষতা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।
এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শিক্ষার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা, সহযোগিতা, নিজেকে প্রকাশ, অন্যের মতামতকে সম্মান করা, কঠিনভাবে চিন্তাভাবনা করা ও সমস্যা সমাধান করা।
শিক্ষাক্রমে ভাষা শেখা, যোগাযোগ, গণিত এবং যুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শেখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে এনসিটিবি পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেয়নি।
মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়িক শাখাগুলো একত্রিত করে কেবলমাত্র দশম শ্রেণির সিলেবাস অনুযায়ী পাঁচটি বিষয়ে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষাগুলো নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচএসসি) একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শুক্রবারের পরিবর্তে, স্কুলগুলো শুক্র ও শনিবার দুই দিন ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০১২ সালে শেষবারের মতো শিক্ষাক্রম সংশোধন করা হয়েছিল।
Comments