পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষার কথা ভাবছে ইউজিসি
শিক্ষার্থীদের সুবিধা ও সেশন জট কমানোর কথা বিবেচনা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
অনলাইন পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা আগামী বৃহস্পতিবার ইউজিসির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে মূল্যায়ন করার বিষয়টি ইউজিসির বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা উপাচার্যদের সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বসবো। এ অনিশ্চিত মহামারি পরিস্থিতিতে আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নির্ভর করবে, যেহেতু এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি তাদের নিজ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেবেন।’
মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস চালু রেখেছিল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সময়সীমা কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ২৩ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
ইউজিসির পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
ইউজিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, কীভাবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে একটি খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নির্দেশিকা প্রস্তুত করেছে। বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে সেই খসড়াটি উপস্থাপন করা হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত বছরের এপ্রিল থেকে দুটি সেমিস্টারের তাত্ত্বিক ক্লাস শেষ করলেও এখনো সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষাগুলো হয়নি। পরীক্ষাগুলো কখন হবে, তা নিশ্চিত না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সৃজনশীল অ্যাসাইনমেন্ট’, ‘সৃজনশীল কুইজ/এমসিকিউ প্রশ্ন (নৈর্ব্যক্তিক) বিষয়ে অনলাইন পরীক্ষা এবং ‘সময়সীমাযুক্ত ক্লাস পরীক্ষা’ ও ‘মৌখিক পরীক্ষাতে’ অংশ নিলে শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেড দেওয়া যেতে পারে। ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হবে।
নির্দেশিকা তৈরি কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে সবগুলো বিকল্প কিংবা দুই অথবা তিনটি নির্বাচন করতে পারেন। তবে, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাদের ডিভাইসের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু রাখতে হবে।’
কমিটির সদস্যটি আরও বলেন, ‘ইউজিসি পরীক্ষাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে এবং খেয়াল রাখবে যাতে কোনো শিক্ষার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসের স্বল্পতা, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা ও পরীক্ষা চলাকালীন কোনো অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়গুলোর দিকেও ইউজিসিকে কড়া নজর রাখতে হবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের একটি সংগঠন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘চুয়েটসহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাইনাল পরীক্ষা নিচ্ছেন।’
‘অনলাইন পরীক্ষার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু, মহামারির মধ্যে আমরা আর কতদিন এভাবে বসে থাকব? এক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইসের অভাব ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা না থাকাসহ আরও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমাদের এই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে দূর করতে হবে’, বলেন তিনি।
আলমগীর জানান, বৈঠকে তারা উপাচার্যদের সঙ্গে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইউজিসি বলেছিল, চাইলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব স্ব অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফাইনাল পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে।
সেসময়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সেশনজট এড়ানো ও শিক্ষার্থীরা যাতে পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষাগুলো নিতে চেয়েছিলেন।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন ইমরান মাহফুজ
Comments