অক্সিজেনের পর দেখা দেবে চিকিৎসক-নার্স সংকট: ডা. দেবী শেঠি

বিশ্বখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডা. দেবী শেঠি সতর্ক করেছেন যে, ভারতের কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সংকট সমাধানের পর বড় চ্যালেঞ্জ হবে চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি।
Devi Shetty.jpg
ডা. দেবী শেঠি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ডা. দেবী শেঠি সতর্ক করেছেন যে, ভারতের কোভিড রোগীদের অক্সিজেন সংকট সমাধানের পর বড় চ্যালেঞ্জ হবে চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি।

সম্প্রতি ভারতের সিম্বিয়োসিস ইন্টারন্যাশনাল (ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়) আয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এক ভার্চুয়াল সম্মেলনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ওই ভার্চুয়াল সম্মেলনে ডা. শেঠি বলেন, ‘অক্সিজেন সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে এরপরই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যে সমস্যাটি দেখা যাবে তা হলো- আইসিইউতে থাকা রোগীদের মৃত্যু। কারণ, তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো যথেষ্ট নার্স-চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। এটিই ঘটতে চলেছে। এ নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘মে মাসে প্রচণ্ড গরম হতে পারে। শারীরিকভাবে সক্ষম মানুষটির পক্ষেও কোভিড আইসিইউতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। মহামারির প্রথম ঢেউ থেকে যেসব চিকিৎসকরা কাজ করছেন, তারা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকের বার্নআউট হচ্ছে। আবার অনেকে সংক্রমিতও হয়ে পড়ছেন।’

ডা. শেঠি আরও জানান, দেশে যাদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে আরও ৫-১০ জন ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও, তাদের পরীক্ষা হচ্ছে না। এর মানে হলো, ভারতে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০ লাখ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন।

পাঁচ লাখ অতিরিক্ত আইসিইউ বেড তৈরি করা প্রয়োজন

ডা. শেঠি বলেন, ‘পরিসংখ্যানগতভাবে বয়স নির্বিশেষে মোট কোভিড রোগীদের পাঁচ শতাংশের জন্য আইসিইউ বেডের প্রয়োজন। এর মানে হলো ভারতে প্রতি দিন প্রায় ৮০ হাজার আইসিইউ বেডের চাহিদা আছে। কিন্তু, ভারতে আইসিইউ বেড আছে ৭০ থেকে ৯০ হাজারের মতো। এর সবগুলোই এখন দখল হয়ে আছে, অথচ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ এখনো শীর্ষে পৌঁছায়নি। এদিকে, এক জন কোভিড রোগীর কমপক্ষে ১০ দিন আইসিইউতে থাকতে হয়। ফলে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত পাঁচ লাখ অতিরিক্ত আইসিইউ বেড তৈরি করা প্রয়োজন।’

সংকট মোকাবিলায় শিগগির ২ লাখ নার্স নিয়োগ দেওয়া উচিত

ডা. শেঠি জানান, আইসিইউতে থাকা কোভিড রোগীরা মূলত নার্সদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। শুধু করোনা মোকাবিলায় আগামী এক বছরে ভারতের দুই লাখ নার্স ও দেড় লাখ চিকিৎসক প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘ভারতের নার্সিং স্কুল ও কলেজগুলোতে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার নার্স তিন বছরের জিএনএম বা চার বছরের বিএসসি কোর্সের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে, তবে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো হয়নি।’

তার মতে, এই প্রশিক্ষিত নার্সদের এক বছরের জন্য কোভিড আইসিইউতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। এরপর তারা তাদের ডিগ্রির সনদ পেতে পারেন।

কোভিড আইসিইউতে কাজ করা চিকিৎসকদের এনইইটি পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া উচিত

ডা. শেঠি জানান, বর্তমানে পিজিতে (প্রক্টের অ্যান্ড গ্যাম্বল হাইজিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার লিমিটেড) চাকরি পেতে এনইইটি প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ তরুণ চিকিৎসক লাইব্রেরিতে বসে এমসিকিউয়ের উত্তর খুঁজছেন। ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন ও ন্যাশনাল বোর্ড অব এক্সামিনেশনের উচিত অবিলম্বে অনলাইনে যথাযথভাবে এনইইটি পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশ করা।

এমনকি, এরপরেও যে এক লাখ চিকিৎসক পাশ নম্বর তুলতে পারবেন না, তাদেরও কোভিড আইসিইউগুলোতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিত। পরের বছর প্রবেশিকা পরীক্ষায় কোভিড আইসিইউতে কাজ করা এই চিকিৎসকদের গ্রেস নম্বর (অতিরিক্ত নম্বর) দেওয়া যেতে পারে।

পিজি’র প্রশিক্ষণ নেওয়া চিকিৎসকরা আইসিইউতে কাজ করার জন্য চাইলে পরীক্ষায় নাও অংশ নিতে পারেন

ডা. শেঠি আরও বলেন, ‘ভারতে ২৫ হাজার চিকিৎসক আছেন, যারা স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন, তবে এখনো পরীক্ষায় অংশ নেননি। এই শিক্ষার্থীদের বলা যেতে পারে, তারা যদি কোভিড আইসিইউতে এক বছরের জন্য কাজ করেন, তবে পরীক্ষা ছাড়াই তাদের ডিগ্রি দেওয়া যেতে পারে।’

এ ছাড়া, ৯০ হাজার থেকে এক লাখ চিকিৎসক যারা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্নাতক পাস করেছেন কিন্তু এখনো ভারতের জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা দেননি, তাদেরও এই সুযোগ দেওয়া উচিত। এক বছরের জন্য আইসিইউতে কাজ করলে তাদেরকে নিবন্ধন সনদের যোগ্য বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

স্তর-২ ও স্তর-৩ নগরগুলোর দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত

এই চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োগের সময় স্তর-২ ও স্তর-৩ শহরগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ডা. শেঠি।

ভারতে যেসব নগরের জনসংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ সেগুলোতে স্তর-২ এর নগর বলে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার জনসংখ্যার নগরগুলোকে স্তর-৩ নগর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ডা. শেঠি জানান, স্তর-২ ও স্তর-৩ এর নগরগুলোতে তেমন বেসরকারি হাসপাতাল নেই। সেখানকার সরকারি হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি সেখানে আরও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া না হয়, তাহলে স্তর-২ ও স্তর-৩ শহরগুলোর অবস্থা শিগগিরই দিল্লি বা মুম্বাইয়ের মতো খারাপ হয়ে উঠতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

14m ago