পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে

দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে।
স্টার ফাইল ছবি/প্রবীর দাশ

দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে, বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী জুন-জুলাইয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পরীক্ষা পেছানোর কথা জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ফরিদ বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের জন্য ঈদের পর আবার বৈঠকে বসব।’

সাধারণত, পরিষদের বৈঠকে পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখগুলো নির্ধারণ করা হয়, যাতে তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে না যায়।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত তাদের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার সময় সেই সম্ভাব্য তারিখগুলো অনুসরণ করে। পরিষদ গত ফেব্রুয়ারিতে বসে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছিল।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে, দেশে সম্প্রতি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে।

গত ২৯ এপ্রিল ঢাবি কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৬ আগস্ট, ‘খ’ ইউনিটের ৭ আগস্ট, ‘গ’ ইউনিটের ১৩ আগস্ট ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগের সিদ্ধান্ত ছিল, ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২১ মে, ‘খ’ ইউনিটের ২২ মে, ‘গ’ ইউনিটের ২৭ মে ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৮ মে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ কোভিড পরিস্থিতির কারণে আবেদনের সময়সীমা ২৪ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

ভর্তি প্রার্থীদের ৩০ মে ও ১ জুন প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় বসতে হবে। এরপর সেখান থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের ১০ জুন চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেছেন, ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠিতব্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে— এটা নিশ্চিত ছিল।

তিনি আরও বলেছেন, ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক আবেদনের প্রক্রিয়া ১ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা ছিল। কিন্তু, লকডাউন শেষ হওয়ার পর আমরা ১০ দিন সময় বাড়িয়েছিলাম। তাই, আমাদের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে।

২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের জন্যে আগামী ১৯ জুন, ২৬ জুন ও ৩ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্য সাতটি পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গুচ্ছ ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চলছে। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১০ জুন এবং পরীক্ষার তারিখ ৩১ জুলাই।

সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হলো— বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)— এই তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের প্রক্রিয়া ৮ মে শেষ হবে এবং ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ জুন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও ২২ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এই বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রার্থীদের জন্য তুমুল প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে।

মহামারির কারণে এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় এবং এর আগের বছর অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করায় এইচএসসিতে রেকর্ড-সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, করোনা মহামারির কারণে এইচএসসির জন্য নিবন্ধিত প্রত্যেককে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬১০ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৪১ হাজার ৮০৭।

সব বোর্ড মিলে নয় হাজার ৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, যাদের মধ্যে সাত লাখ ছয় হাজার ৮৮৫ জন ছেলে ও ছয় লাখ ৬০ হাজার ৪৯২ জন মেয়ে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রত্যেকেই ইতোমধ্যে তাদের সনদ পেয়েছে।

 

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago