দখলমুক্ত ও খননের পর প্রাণ ফিরছে চাকিরপশার নদীর

নদীটি দখলমুক্ত করে খনন কাজ শুরু হয়েছে। ছবি: দিলীপ রায়

দীর্ঘদিনের অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খননের পর প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চাকিরপশার নদী। প্রায় তিন বছর ধরে ‘চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির’ চেষ্টার পর নদীটি দখলমুক্ত করে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে।

চাকিরপশার তার অস্তিত্ব ফিরে পেলে ওই অঞ্চলের কৃষি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নতি হবে, পাশাপাশি জীবিকা টিকিয়ে রাখতে পারবেন স্থানীয় জেলেরাও।

নদীসুরক্ষা কমিটির সদস্যরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে কয়েক দফা মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, নৌকা বৈঠক ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পর নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। নদীটি দখলমুক্ত করার পর খননের কাজ শুরুর খবরে স্বস্তি ফিরে এসেছে স্থানীয়দের মাঝে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নদী খননের কাজ চলছে।

বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সিএস রেকর্ড অনুযায়ী রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের ইটাকুড়ির দোলার কাছে আঙ্গাধোয়ার ব্রিজ থেকে দক্ষিণ দিকে একই ইউনিয়নের নলাডাঙার ব্রিজ পর্যন্ত খনন করা হবে।’

নদীটি দখলমুক্ত করার পর খননের কাজ শুরুর খবরে স্বস্তি ফিরে এসেছে স্থানীয়দের মাঝে। ছবি: দিলীপ রায়

আপাতত বিএডিসি একটি প্রকল্প হিসেবে নদীটির খনন কাজ করছে, তবে পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাকি অংশ খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৪ মে থেকে খনন কাজ শুরু হয়েছে এবং সামনের বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ শেষ করা হবে।’

বিএডিসি’র এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নদীটি খনন করায় এই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমির জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং সারাবছর কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারবেন।’

চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহবায়ক খন্দকার আরিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এই নদীটি দখলমুক্ত করে খনন করা সম্ভব হচ্ছে।’

তিনি জানান, প্রথমে তারা জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনে স্মারকলিপি দেন, তারপর জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কাছেও স্মারকলিপি পাঠান।

তিনি আরও জানান, নদী খননের ফলে এই অঞ্চলে ১০টি মৌজার কৃষি ও মৎস্যজীবী প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দা সরাসরি উপকৃত হবেন। সবশেষ প্রায় ৩০ বছর আগে এই নদী খনন করা হলেও দীর্ঘ দিনের অবৈধ দখলে নদীটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নদীটির খনন কাজ শেষ হলে প্রায় ২৫ হাজার একর ধানের জমির জলাবদ্ধতা দূর হবে। এর ফলে কৃষিকাজে এর সুফল আসবে। নদীতে সারাবছর পানি থাকলে মাছও থাকবে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য সর্বপরি পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে।’

এছাড়া নদীর উৎসমুখে খননের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মাঝপথে দখল হওয়া নদীর জমি উদ্ধার করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বজায় রাখারও দাবি জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চাকিরপশার নদীর ৩০৬ একর জমির মধ্যে প্রায় ১৬৫ একর জমি ১৪০ জন দখলদারদের দখলে রয়েছে। এটি দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা।

দখলদারদের কবল থেকে জমি দখলমুক্ত করে নদীটির গতিপ্রবাহ সচল রাখতে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খনন কাজ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি প্রকল্প গ্রহণের কথাও জানানো হয়েছে। এছাড়া ইতোমেধ্যে বিএডিসি একটি খনন কাজের প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

5h ago