‘যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে’

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রুবেল মিয়া (৩৫) চাকরি করেন গাজীপুরের এস এম নীটওয়্যার কারখানায়। তিনি কারখানার সুইং অপারেটর। ঈদ উপলক্ষে সোমবার থেকে ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন তিনি। দূরপাল্লার যানবাহন না পেলেও যেকোনো উপায়ে বাড়ি যেতে তৈরি তিনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ছবি: স্টার

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রুবেল মিয়া (৩৫) চাকরি করেন গাজীপুরের এস এম নীটওয়্যার কারখানায়। তিনি কারখানার সুইং অপারেটর। ঈদ উপলক্ষে সোমবার থেকে ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন তিনি। দূরপাল্লার যানবাহন না পেলেও যেকোনো উপায়ে বাড়ি যেতে তৈরি তিনি।

রুবেল মিয়া জানান, যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে। এখনও পরিবারের কারও জন্য কেনাকাটা করা হয়নি। মঙ্গলবার বাড়ির উদ্দেশে বের হয়েছেন সকাল ১১টায়। গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ীর অপেক্ষা করছেন। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। চোখের সামনেই অনেকে মালপত্র নিয়ে পিকআপ ভ্যানে সপরিবারে চড়ছেন। একের পর এক পিকআপ ভ্যান যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে স্থানীয় যাত্রীবাহী বাসগুলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো গাজীপুরের বাইরে যাচ্ছে না। দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে একটিও বাস পাননি জামালপুর যাওয়ার জন্য। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন যে পর্যন্ত যাওয়া যায় সে পর্যন্তই যাবেন। কিছুদূর গিয়ে আবার গাড়ি বদলে অন্য গাড়িতে চড়বেন।

ছবি: স্টার

এস এম নীটওয়্যার লিমিটেডের কর্মী রফিকুল ইসলামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবর্দীতে। তিনি এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০ থেকে কখনও দাঁড়িয়ে কখনো রাস্তার পাশে বসে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে উঠার মতো কোনো বাহন পাননি। যে কয়টা বাস চলছে সবগুলো অল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বলে যাত্রী তুলছে। আবার ভাড়াও হাঁকছে বেশি। তিন বার পিকআপ ভ্যানে উঠতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কোনো যানবাহন পাওয়া গেলেও মধ্য রাতের আগে বাড়ি পৌঁছানোর আশা ছেড়েছেন তিনি।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পোশাক কারখানার শ্রমিক জসীম উদ্দিন বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ট্রাক ও পিকআপে করে বাড়িতে যাওয়া যায় শুনেছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি একজন ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকেনো যাওয়ার জন্য যাত্রী ডাকছেন। ময়মনসিংহ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এটা দ্বিগুণেরও বেশি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দিলে ভালো করত সরকার। কারণ আমরা যারা ছোট চাকরি করি বাড়িতে আসা-যাওয়ায় অনেক বেশি খরচ হওয়ায় পরিবারের উপর চাপ পড়ছে। বাড়িতে যাচ্ছি বৃদ্ধ মা-বাবা, বউ-ছেলেমেয়ের সঙ্গে ঈদের সময়টা কাটালে ভালো লাগবে বলে।

ছবি: স্টার

বাস বন্ধ থাকায় গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকার পলমল গ্রুপের সাফা সোয়েটার কারখানার শ্রমিক আলমগীর হোসেন ১৪ জন একসঙ্গে গাজীপুর থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে বগুড়া যাচ্ছেন। তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে।

দুপুরের আগে তেমন কোনো যানজট না থকলেও বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ অভিমুখী লেনের সালনা, বাঘেরবাজার, জৈনাবাজার এলাকায় থেমে থেমে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। 

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহুরুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের কোথাও যানজট নেই। যানজট রোধে ও জন নিরাপত্তার জন্য গাজীপুরে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ৫২৯ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Comments