‘২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে আইয়া পরুম, আমার মানিক আইল লাশ হইয়া’

ঢাকার একটা আসবাবপত্রের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে মায়ের জন্য ঈদে নতুন শাড়ি কিনেছিল কিশোর আনছার আলী। কিন্তু সেই শাড়ি আর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হলো না।
সন্তান আনছার আলীকে হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায় মা নাছিমা আক্তার। ছবি: স্টার

ঢাকার একটা আসবাবপত্রের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে মায়ের জন্য ঈদে নতুন শাড়ি কিনেছিল কিশোর আনছার আলী। কিন্তু সেই শাড়ি আর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হলো না।

ঢাকা থেকে ঈদে বাড়ি ফেরার পথে গতকাল বুধবার শিমুলিয়া ও বাংলাবাজার নৌপথের ফেরিতে পদদলিত হয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে আনছার (১৫)।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কালিকা প্রসাদ গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাদবরের ছেলে আনছার আলী। আনছারের সহকর্মী বরিশালের বানারিপাড়া এলাকার সবুজ ঢালী জানান, আনছারের বড় বোন নয়নতারাও ঢাকার একটা কারখানার শ্রমিক। ঈদের ছুটি উপলক্ষে দুই ভাই-বোন এবং তিনি গতকাল বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ৮টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছান তারা। ১০টার দিকে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে শাহ্ পরান নামের একটি ফেরিতে ওঠার চেষ্টা করেন।

এ সময় আনছার তার বোনের হাত ধরা ছিল। কিন্তু ভিড়ের কারণে সে ছিটকে আলাদা হয়ে যায়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে তারা আর আনছারকে খুঁজে পায়নি । ভেবেছিলেন ফেরি তীরে যাওয়ার পর খুঁজে পাবেন। কিন্তু, দুপুর ১২টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর ফেরি থেকে আনসার আলীর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সবুজ ও নয়নতারা জানতে পারেন, তাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে ছিটকে ফেরির মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলে আনছার। সেখানেই পদদলিত হয়ে তার মৃত্যু হয়।

গতকাল দুপুর ২টার দিকে আনছার আলীর মরদেহ কালিকা প্রসাদ গ্রামে আনা হয়। সন্ধ্যায় স্থানীয় বাংলাবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাইয়ের মৃত্যুতে বোন নয়নতারা বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। বাড়ির উঠানে বিলাপ করছেন মা নাছিমা আক্তার। স্বজনরা তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

কাঁদতে কাঁদতে নাছিমা আক্তার বলেন, ‘ওদের ভাই-বোনের জমানো টাকা দিয়ে বাড়িতে নতুন টিনের ঘর বানাইছি। ঈদে ওরা বাড়ি আইলে মিলাদ দিয়া নতুন ঘরে ওঠার কথা আছিল। আমার বাবা সকালে মাওয়া ঘাটে আইসা ফোন করছিল। বলছিল, মা আমি তোমার লইগ্যা নতুন শাড়ি আনছি, দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে আইয়া পরুম। আমার মানিক আইল লাশ হইয়া।’

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তী রুপা রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনছারের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পরিবারটিকে ভ্যান, অটোরিকশা অথবা একটি দোকান করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা।

Comments