কাতারে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ, অংশ নেয় বাংলাদেশিরাও

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতারে ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। কাতারের জনগণ ও অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নেন।
বিপুলসংখ্যক নারী ও নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে দেশটির স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এই বিক্ষোভ সমাবেশে।

গতকাল শনিবার রাতে রাজধানী দোহায় কাতারের জাতীয় মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের কাতার, ফিলিস্তিনি ও নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে সংহতি জানাতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগানে স্লোগানে ইসরায়েলি বাহিনীর অবৈধ ও অমানবিক আচরণ এবং হামলার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি ভালোবাসা ও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
এমনকি, তারা আল-আকসা মসজিদের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণাও দেন। তারা গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
কাতার সফররত হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরো প্রধান ও ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়াও সমাবেশ অংশ নেন এবং বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘প্রতিরোধ চলছে এবং ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের সব অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত নমনীয় হবে না। তারা যা কিছু আছে তা দিয়ে পবিত্র ভূমিকে রক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, সাধারণত কাতারে এ ধরনের প্রতিবাদ-সমাবেশের চর্চা নেই। স্মরণকালের মধ্যে এমন সমাবেশ আর হয়নি বলে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে বেশ উৎসাহ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কাতারের বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা শরিফুল হক সাজু বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর এমন বর্বর হামলা আর গণহত্যার পর কোনো বিবেকবান মানুষ প্রতিবাদ না জানিয়ে পারে না। যদিও বিশ্বসম্প্রদায় চুপ আছে, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাতে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে সমাবেশে এসেছি।’
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী প্রবাসীদের অনেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন দেখানোর এমন সুযোগ দেওয়ার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক আমিন বেপারি বলেন, ‘এখানে সব দেশের প্রবাসীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে পেরেছেন, যা এরকম কঠিন সময়ে তাদের মনোবল বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।’
কাতারের ফিলিস্তানি প্রবাসীরাও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। দোহার বাসিন্দা ফিলিস্তিনি রিম আলঘল কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ইসরায়েল গণহত্যা চালানোয় এর বিরুদ্ধে আমি অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দেশকে মুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করবো।’
‘যেহেতু আমরা শারীরিকভাবে ফিলিস্তিনে থাকতে পারছি না, তাই এই প্রতিবাদ সমাবেশে এসেছি। আমি খুবই ক্ষুদ্ধ, যা ঘটছে তাতে খুব মন খারাপ হয়েছে।’
গাজায় গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪১ শিশুসহ ১৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার। অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গত ১০ মে থেকে গাজায় এ হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গতকাল গাজায় ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১২ তলা একটি ভবন ধুলায় মিশে গেছে। ভবনটিতে আল–জাজিরা, আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ (এপি) আরও বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ছিল।
Comments