সরাইলে পুলিশ পরিচয়ে হাঁস খামারে ডাকাতি, আটক ১
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে আসামি তল্লাশির নামে এক খামারির হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে প্রায় ১২ শ হাঁস লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামে তিতাসের তীরে বাচ্চু মিয়ার খামারে গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামকে (৪০) আটক করা হয়েছে।’
ডাকাত দলের হামলার শিকার বাচ্চু মিয়ার বাড়ি পার্শ্ববর্তী নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের গুজিয়াখাইল গ্রামে।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে খামারের দুজন ঘুমিয়ে ছিলাম। নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন এসে নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলেন। এরপর হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে ফেলেন। তারা খামারে থাকা ১,২০৮টি হাঁস, ডিম বিক্রির নগদ ৫০ হাজার টাকা, একটি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি গ্যাসের চুলা লুট করে নিয়ে যায়।’
বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার সকালে অরুয়াইল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে মেঘনার তীর ও গ্রামের কয়েকটি জায়গায় মৃত হাঁস পড়ে থাকতে দেখে সেগুলো সংগ্রহ করেন।
সেদিন দুপুর পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ মৃত হাঁস সংগ্রহ করেছেন। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে ওই গ্রামের একটি খামারে গিয়ে তার বাকি হাঁসগুলোর সন্ধান পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে রাজাপুর গ্রামের শফিকুলসহ তার তিন ভাই জড়িত থাকতে পারে জেনে তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ গতকাল সন্ধ্যায় ওই গ্রামে গিয়ে শফিকুলকে আটক করে।
বাচ্চু মিয়া আরও বলেন, ‘লুট হওয়া হাঁসগুলোর বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। সেগুলো উদ্ধার করতে না পারলে আমি পথে বসে যাবো।’
অরুয়াইল বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত ২৭ মার্চ হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করলে থানার পরিদর্শকসহ ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এরপর ওই ফাঁড়ির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় মূলত ওই এলাকায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। ঈদের আগের দিন অরুয়াইল বাজারের একটি দোকানে ও মেঘনা নদীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
বাজারের একাধিক নৈশপ্রহরী ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সেখানে প্রায় ১,২০০ দোকান রয়েছে। সন্ধ্যার পর বাজারটি নীরব হয়ে যায়।
সেখানে পুলিশ না থাকায় নিরস্ত্র প্রহরীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে তারা আরও জানিয়েছেন, একসময় দোকান মালিকরা লাখ টাকার মালামাল দোকানে রেখে নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতেন। এখন চুরি-ডাকাতির ভয়ে তারা নির্ঘুম রাত কাটান।
ওসি মো. আসলাম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আটক শফিকুল ইসলামকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। মামলার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফাঁড়ি না থাকায় সেই এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া ফাঁড়ির বিষয়ে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।’
Comments