গামছা যখন মারণাস্ত্র

দুবাইয়ে আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করতেন বগুড়ার শিবগঞ্জের সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর (৩৫)। গত বছর নভেম্বরে দেশে এসে আটকা পড়েন করোনার কারণে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞায়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত ৫ মে দুই বছরের জন্য দুবাইয়ে যেতে বাড়ি থেকে বৃদ্ধা মা, স্ত্রীসহ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয়েছিলেন।

দুবাইয়ে আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করতেন বগুড়ার শিবগঞ্জের সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর (৩৫)। গত বছর নভেম্বরে দেশে এসে আটকা পড়েন করোনার কারণে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞায়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত ৫ মে দুই বছরের জন্য দুবাইয়ে যেতে বাড়ি থেকে বৃদ্ধা মা, স্ত্রীসহ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয়েছিলেন।

কিন্তু এ যাত্রাই ছিল তার শেষ যাওয়া। পরদিন রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন কুড়িল বিশ্বরোডের ৩০০ ফিট ফ্লাইওভারের ওপরে রক্তাক্ত অবস্থায় সুভাষের মরদেহ উদ্ধার করে টহল পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইকারী, ডাকাত চক্র কৌশলে গাড়িতে তুলে নিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে হত্যা করে পথে ফেলে দেয়।

ইতোপূর্বে কুড়িল ফ্লাইওভারে এরকম একাধিক মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তা এবং রাস্তা পার্শ্ববর্তী খাল থেকে, মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচ থেকেও।

সুভাষ হত্যা মামলার ছায়া তদন্ত করতে থাকা ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন,অধিকাংশ সময়ই ডাকাতি বা ছিনতাই করার মতো কাজে ব্যবহারযোগ্য প্রাণঘাতী অস্ত্র, মালামাল না থাকায় এবং চলনে-বলনে শিষ্ট দেখানোয় চেকপোস্ট অথবা টহলরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ চক্রকে সন্দেহ করে না। অতি সাধারণ গামছাকেই প্রাণঘাতী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে নিমিষেই নিরাপরাধ ব্যক্তির প্রাণ কেড়ে নেয়ার পূর্বে তাই এরা শহরব্যাপী বিচরণ করে নির্বিঘ্নে।

গত বছরের নভেম্বরে দেশে এসে বিয়ে করেন দুবাই প্রবাসী সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর। গত ৬ মে রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে সুভাষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

তিনি জানান, গভীর রাত্রে যখন গণপরিবহন- বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকে তখন দূরপাল্লার যাত্রীরা কখনো কখনো তুরাগ, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, হাউজিংয়ের মোড়, কামারপাড়া, বিমানবন্দর থেকে ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য ওৎ পেতে থাকা সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার অথবা মালবাহী পিকআপে ওঠে। গণপরিবহনের এই স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারী, ডাকাত চক্রের সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ড্রাইভার সাজে। অপর তিন, চার জন সহযাত্রী সেজে উপযুক্ত ভিকটিমকে খুঁজে পেলে লিফট দেয়ার নাম করে গাড়িতে তোলে। তারপর এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে প্রায় শ্বাসরোধ করে ফেলে ছিনিয়ে নেয় টাকাপয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন। ভিকটিম বেশি জোড়াজুড়ি করলে হত্যা করে ফেলে দেয় পথে।

সাধারণ জনগনের সচেতনতার অভাব আছে জানিয়ে ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গভীর রাতে অচেনা, অপরিচিত লোকের সিএনজি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে উঠতে গিয়ে তারা এই সমস্যায় পড়েন। গভীর রাতে অপরিচিত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও সিএনজিতে রাইড শেয়ার না করার অনুরোধ জানান তিনি। সার্বিক বিষয়ের ওপরে নজরদারি রাখা হচ্ছে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারের নীতিমালা অনুযায়ী এই প্রতিবেদনে মরদেহের ছবি প্রকাশ করা হয়নি।

Comments