সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্থাকারীদের বিচার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৫৭ নাগরিকের বিবৃতি

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৭ জন নাগরিক।
আদালতে নেওয়া হচ্ছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৭ জন নাগরিক।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, গত  ১৭ মে প্রথম আলোর সিনিয়র প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনে সচিবালয়ে গেলে  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে, শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পুলিশের কাছে আটক থাকা অবস্থাতেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  রোজিনার বিরুদ্ধে পেনাল কোড ও কুখ্যাত অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট-এর কিছু নিবর্তনমূলক ধারায় মামলা দায়ের করে। আজ ১৮ মে, ২০২১ আদালত রিমান্ডের আবেদন না-মঞ্জুর করলেও রোজিনাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের স্বাস্থ্যর অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে যেয়ে রোজিনা আজ জনগণের অর্থে পরিচালিত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে নিপীড়িত হয়ে জেলে অবস্থান করছে। এ অবস্থাকে আমরা দুঃসহ ও চরম অগ্রহণযোগ্য মনে করছি।

প্রথম আলোর সিনিয়র প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম একজন দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার প্রতিবেদন থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন অফিসের দায়িত্বহীনতা, দুনীতি ও অনিয়ম সম্পর্কে আমরা জেনেছি, এজন্য তিনি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে তার বিভিন্ন প্রতিবেদন স্বাস্থ্যখাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সংঘটিত উল্লেখিত ন্যক্কারজনক ঘটনায় এদেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা, মানবাধিকার এবং নাগরিকের মানবিক মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে এবং বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রোজিনা ইসলাম যাদের রোষানলে পড়েছে, তারাই আজ রোজিনা ইসলাম তথা এদেশে সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠ রুদ্ধ করতে তাকে এভাবে হেনস্তা করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছে। অতীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতির সংবাদের আলোকে আমরা এও মনে করি যে, সরকারি নথির প্রকাশ অনেক ক্ষেত্রে বরং জনস্বার্থের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় এবং এর বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো আইন বা আইনি ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। বিশেষ করে মহামারির প্রেক্ষাপটে এসব তথ্য জানার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে এবং ঔপনিবেশিক আইনের দোহাই দিয়ে, মনগড়া অভিযোগের ভিত্তিতে সে অধিকারে বাধা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।

আমরা রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, হয়রানি ও গ্রেপ্তার করার সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার, তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি করছি। আমরা একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আটক থাকা অবস্থায় রোজিনার উপর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের শারীরিক নিপীড়নের যেসব খবর ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার ভিত্তিতে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সকল সরকারি কর্মকর্তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।

সাংবাদিক রোজিনাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে এবং  নিপীড়নমূলক বার্তা দিচ্ছে তা এদেশের সংবিধান এবং স্বাধীনতার চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা সরকারকে এদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত রাখার ক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টসহ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে এমন সকল আইন ও বিধিবিধান বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিদাতারা হলেন: শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে. চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন খান, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবীর, সুজনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সারা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক স্বপন আদনান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, ড. আসিফ নজরুল, ড. তানজিম উদ্দিন খান, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. সামিনা লুৎফা, ড. শাহনাজ হুদা, ড. সুমাইয়া খায়ের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ড. নাসরিন খন্দকার ও সায়েমা খাতুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম ও ড. সাদাফ নূর, গবেষক ড. নোভা আহমেদ ও রোজিনা বেগম, সাংবাদিক ড. সায়দিয়া গুলরুখ, সাধনার আর্টিস্টিক ডিরেক্টর লুবনা মরিয়ম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের ডা. নায়লা জেড খান, আইনজীবী তবারক হোসেইন, মানবাধিকার কর্মী শারমীন মুরশিদ, হানা শামস আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, পল্লব চাকমা, ড. ফষ্টিনা পেরেরা, অরূপ রাহী, বিনা ডি কস্টা, রেজাউর রহমান লেলিন, শিরিন হক, নূর খান লিটন, রেহনুমা আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, এডভোকেট সালমা আলী, অধ্যাপিকা পারভীন হাসান, অধ্যাপিকা ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক আকমল হোসেন, কবির কিশোর ও ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

Comments

The Daily Star  | English
14-party fragile as AL ‘shifts rightwards’

Seat-Sharing: 14-party alliance meeting tomorrow

Ever since the Election Schedule was announced on November 15, there is growing unease in the alliance over which partner gets to vie for how many constituencies, sources say

12m ago