এডিপির আকার বাড়ছে ১৪ শতাংশ

প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, অপ্রতুল বরাদ্দ, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং খরচ ও সময় কমিয়ে এনে কাজের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে চলমান এক হাজার ৪২৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চার থেকে ১২ বছর সময় লাগবে।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উত্থাপিত এক প্রেজেন্টেশনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় যা ১৪ শতাংশ বেশি।

এতে এক হাজার ৪২৬টি প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা চলতি বছরের ‍জুনের মধ্যে খরচ করা হতে পারে।

বাকি ১১ লাখ চার হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা সামনের বছরগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর এখন যে গতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে, তাতে সবগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চার থেকে ১২ বছর সময় লাগবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ জন্য অপ্রতুল বরাদ্দ, অতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলো শেষ করতে না পারা এবং অতিরিক্ত সময়ে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভূক্তির মতো বিষয়গুলোকে দায়ী করেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাধারণত অনেকগুলো প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যা যথাসময়ে শেষ হয় না। এগুলোর জন্য অপ্রতুল বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় বাড়তে থাকে।

গতকাল এনইসি ৫৯৬টি নতুন কিন্তু অনুমোদহীন প্রকল্পের সম্মতি দিয়েছে। যে প্রকল্পগুলোর জন্য কোনো তহবিল বরাদ্দ করা হয়নি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে যেগুলো সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভূক্ত হবে।

এ ছাড়া এক হাজার ৪২৬টি প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ৬৭৮টি প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উত্থাপিত প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, ৩০ জুনের মধ্যেই এই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়াতে হবে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালের মধ্যে সরকার ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বছর শেষে সেগুলো অবশ্যই সমাপ্ত হবে না।

চলমান এডিপিতে ২১ সালের মধ্যে ৪৪১টি প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এর মধ্যে অন্তত ৫৭টি প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন হবে না। সুতরাং সেগুলো নতুন এডিপিতে যুক্ত করা হয়েছে।

২১ সালের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশোধিত এডিপিতে এটাকে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে।

নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সহযোগিতার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। যা ৬৩ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির তুলনায় ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।

আগে সবগুলো খাতের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৭২১ কোটি টাকার সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। নতুন এডিপিতে যা ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

একই ভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সার্ভিস খাতে ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, শিক্ষাখাতে ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা ও স্বাস্থ্যখাতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছয় হাজার ১৬২ কোটি টাকা, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প তিন হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।

এ ছাড়া এনইসি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অতিরিক্ত ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

25m ago