ইসরায়েলকে সহায়তাকারীরাও সমান অপরাধী: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে ও কূটনীতিকভাবে ইসরায়েলকে যারা সহযোগিতা করছে, তারাও সমান অপরাধী বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইসরায়েলের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারের প্রতি সংহতি জানাতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান ও মো. নোমান, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, গণসংহতি আন্দোলনের
প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা রেহনুমা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান, গণ দলের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণফোরামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, নারীর জন্য সুশাসনের পরিচালক রুবি আমাত উল্লাহ, গণসংহতি’র আবুল হোসেন রুবেল, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রাশেদ খান, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের সভাপতি কালাম ফয়েজি প্রমুখ।
আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে যদি সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে হয়, তবে জীবনাদর্শকে কার্যকর করতে হবে। তার সময়কার সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সরকার সার্বিকভাবে সমর্থন করবে। এর অর্থ আজকে প্রধানমন্ত্রীর দুই কলম চিঠি পাঠিয়ে তার দায়িত্ব শেষ না। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যই শেষ কথা হতে পারে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা উচিত, ফিলিস্তিনিদের এই বেঁচে থাকার আন্দোলনে অর্থ দিয়ে, সামরিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি বঙ্গবন্ধুকে নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন, তবে তার কাজ হবে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা এবং তা কার্যকর করা। সর্বদলীয় কমিটি করে ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, তুরস্ক এই সবাইকে নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো। তাহলেই লুকিয়ে থাকা মানবতাবিরোধী পাশ্চাত্য শক্তি সজাগ হবে। তা না হলে ফিলিস্তিনের প্রতি সহমর্মিতার কথা বলা ভাঁওতাবাজি হবে। ফিলিস্তিনির পাশে থেকে তাদের বিজয় অর্জন করাটাই হবে সত্যিকার অর্থে মানবতার কাজ।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘শুক্রবার জুমার পর সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের একত্রিত হয়ে জিয়ানবাদী দেশগুলোর দূতাবাস ঘেরাও করেন। আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং তাদের বলতে হবে ইয়েমেনে তোমাদের নির্যাতন বন্ধ কর।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জনগণের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সব কিছু বলবে সরকার, আমরা কোনো কিছু বলতে পারব না। আজকে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা আমরা এখানে সভা করে বলতে পারব না। কিন্তু সরকার তো বলতে পারতো। জাতিসংঘ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে নেতানিয়াহু কর্ণপাত করছে না। এই সামগ্রিক বিষয়ে সরকার চাইলে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারত। কিন্তু এরা শুধু সত্যকে মিথ্যা বানানোর চেষ্টা করে, যেটা সাংবাদিক রোজিনার ক্ষেত্রে হলো। যদি এদের সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়তে না পারি, তাহলে এরকম একটা দুইটা সমাবেশ করে আমাদের কোনো কাজ হবে না।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের সর্বোচ্চ নেতার বিচারের দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘ইসরাইলের মতো একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের সমর্থন করা নিন্দনীয়।’
এসময় ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের নীরব থাকারও কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি জোরালোভাবে বলছি- আরবদের সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকা উচিত।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘ইসরায়েলিরা যখন ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায় তখন পশ্চিমারা বলে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ঠিক আমাদের দেশে যখন নুরদের ওপর হামলা চালানো হয় তখন তারা প্রতিরোধ করলে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়। আমরা আজকে সাংবাদিক রোজিনার ক্ষেত্রেও দেখি যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন তার বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে। এটাই নিপীড়নকারীদের কৌশল। তারাই আক্রমণ করবে তারাই আবার মামলা করে হয়রানি করবে।’
ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে বিশ্ব নেতাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা উলফাত আজিজ বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশের ভূমির জন্য একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ইসরাইলি অগ্রাসনে শিশু, নারীসহ হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ গণহত্যার শিকার হচ্ছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
এসময় সাংবাদিক রোজিনার প্রসঙ্গ টেনে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘এ দেশের একটি করপোরেট পত্রিকায় আজ রোজিনার কোনো নিউজ ছাপা হয়নি। এই পত্রিকা আমাদের দরকার নেই।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আজকে এই সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনিতে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা তাদের পাশে অতীতে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’
ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের প্রতিনিধি আজকের নাগরিক সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।
এসময় তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি চান।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘এই আগ্রাসন শুধু ইসরাইল করে না, যারা তাদের সহযোগী তারা সবাই এই অগ্রাসন করে। শিশুদের ওপর শুধু ইসরায়েলিরা বোমা মারে না। যারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করে তারা সবাই এই বোমা মারে। বাঙালি হিসেবে আমাদের সবার উচিৎ সব নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলা।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের যেখানে শত বছর ধরে বসবাস সেখানে তাদের সামরিক শক্তির বলে গত সত্তর বছর ধরে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এই জায়নবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে।’
Comments