হাসারাঙ্গা ঝড় থামিয়ে বাংলাদেশের স্বস্তির জয়
২৭০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি থেকে তিন ফিফটিতে কেবল আড়াইশো পেরুনো পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য সফরকারী শ্রীলঙ্কানদের কাছে ওই রানই হয়ে গিয়েছিল পর্বত সমান। মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্পিনে এক পর্যায়ে দিশেহারা অবস্থা হয়ে যায় তাদের। তবে চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে দলকে খেলায় ফেরান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। শেষ পর্যন্ত তার ঝড় থামিয়ে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
আগে ব্যাট করে মুশফিকুর রহিমের ৮৭ বলে ৮৪ রানে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান করে তামিম ইকবালের দল। ফিফটি পান অধিনায়ক তামিম আর মাহমুদউল্লাহও। তবে পরিস্থিতির বিচারে আর খেলার ধরনে মুশফিকই রাখেন বড় অবদান। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি।
মাঝারি পুঁজিতে দলকে জেতাতে ৩০ রানে ৪ উইকেট নেন মিরাজ। ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান।
রান তাড়ায় হিসাব-নিকাশ করে আগাতে না পারা লঙ্কানদের আক্ষেপ বাড়িয়ে ৬০ বলে ৭৪ করে যান হাসারাঙ্গা। বাকিরা কেউ বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হননি।
২৫৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ইতিবাচক শুরু এনেছিলেন দানুশকা গুনাথিলাকা। কিন্তু ইনিংস বড় করা হয়নি তার। ৫ চারে ১৯ বলে ২১ করে ক্যাচ দেন বোলার মিরাজকেই।
নিরোশান ডিকভেলাকে বসিয়ে তরুণ পাথুম নিশানকাকে খেলিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ফল মেলেনি। ৮ রান করে এই ডানহাতি পুল মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মোস্তাফিজের বলে।
অধিনায়ক কুসল পেরেরা আর সহ-অধিনায়ক কুসল মেন্ডিস জুটি বাঁধেন তৃতীয় উইকেটে। প্রাথমিক পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলেন তারা। তাদের জুটি বিপজ্জনক হতেই বল হাতে নিয়ে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের স্লো ডেলিভারি একটু এগিয়ে তড়িঘড়ি খেলতে গিয়ে গড়বড় করেন মেন্ডিস। টপ এজ হয়ে তার ক্যাচ যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো মিরাজের হাতে।
৪১ রানের এই জুটি ভাঙার পরই পথ হারায় লঙ্কানরা। অধিনায়ক পেরেরা মিরাজের স্টাম্পমুখী বলে অহেতুক কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আউট হয়েছেন আরও দৃষ্টিকটুভাবে। মিরাজকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্প হারান তিনিও।
আশেন বান্দারা উইকেটে গিয়ে হাঁসফাঁস করছিলেন। তিনিও দমবন্ধ অবস্থা থেকে বাজে শটে নিজেকে দেন মুক্তি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে হন বোল্ড। ১০২ রানেই পড়ে যায় লঙ্কানদের ৬ উইকেট।
আটে নেমে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিলেন হাসারাঙ্গা। দাসুন শানাকে নিয়ে পেয়ে গিয়েছিলেন একটা জুটি। অষ্টম উইকেটে ৪০ বলে ৪৭ রানের জুটির পর শানাকাকে বোল্ড করে ব্রেক থ্রু আনেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
এরপর গুটিয়ে না গিয়ে লঙ্কানরা ম্যাচে ফেরে আরও ভালোভাবে। ইসুরু উদানাকে নিয়ে দারুণ আরেক জুটি পেয়ে যান হাসারাঙ্গা। আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান একের পর এক ছক্কায় ভয় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের। নবম উইকেট জুটিতে এসে গিয়েছিল ৫৯ বলে ৬২ রান।
প্রচণ্ড গরমে খেলার ক্লান্তি শেষ পর্যন্ত কাবু করেছে তাকে। ৩৮ বলে ৪৮ রানের সমীকরণ থাকা অবস্থায় সাইফুদ্দিনকে পুল করতে গিয়েছিলেন। জোরে লাগাতে না পারায় ক্যাচ যায় ডিপ মিড উইকেটে। ৬০ বলের ইনিংসে ৩ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কা মারেন তিনি।
পরের ওভারে মোস্তাফিজের বলে ফিরে যান উদানাও। তখনই মূলত শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার দৌড়। ৩৯তম ওভারে পেশিতে টান পড়ে বেরিয়ে যাওয়া মোস্তাফিজ মাঠে ফিরে মুড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের ইনিংস।
এর আগে তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর তিন ফিফটিতে বাংলাদেশ পায় লড়াইয়ের পুঁজি। তবে একটা পর্যায়ে ২৭০ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। শেষ ১০ ওভারে কার্যকর ঝড় না আসায় তা আর হয়নি। ইনিংস বিরতিতে মনে হয়েছিল, থেকে গেছে অন্তত ২০ রানের ঘাটতি।
তবু ওই সংগ্রহ নিয়েও লঙ্কানদের তালগোল পাকানো রান তাড়ার ধরন কাজটা সহজ করে দেয় বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৭/৬ (তামিম ৫২, লিটন ০, সাকিব ১৫, মুশফিক ৮৪, মিঠুন ০, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, আফিফ ২৭*, সাইফুদ্দিন ১৩*; উদানা ০/৬৪, চামিরা ১/৩৯, ধনঞ্জয়া ৩/৪৫, গুনাথিলাকা ১/৫, হাসারাঙ্গা ০/৪৮, সান্দাকান ১/৫৫)
শ্রীলঙ্কা: ৪৮.১ ওভারে ২২৪ (গুনাথিলাকা ২১, পেরেরা ৩০, নিশানকা ৮, মেন্ডিস ২৪, ধনঞ্জয়া ৯, বান্দারা ৩, শানাকা ১৪, হাসারাঙ্গা ৭৪, উদানা ২১, সান্দাকান ৮*, চামিরা ৫; মিরাজ ৪/৩০, তাসকিন ০/৬২, মোস্তাফিজ ৩/৩৪, সাইফুদ্দিন ২/৪৯, সাকিব ১/৪৪, মাহমুদউল্লাহ ০/১)
ফল: বাংলাদেশ ৩৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।
Comments