দূরপাল্লার বাস চালু হলেও কাঙ্ক্ষিত যাত্রী নেই

Gabtoli.jpg
দিনের বেলায় গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীর চাপ খুব একটা নজরে আসেনি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে টার্মিনালে যাত্রী আসতে দেখা গেছে। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৫১ দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার থেকে ফের চালু হয়েছে আন্তঃজেলা গণপরিবহন। দীর্ঘদিন পর দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তেমন স্বস্তির সুবাতাস নেই। তারা কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

সরেজমিনে আজ দুপুরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে যাত্রীর চাপ খুব একটা নজরে আসেনি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে টার্মিনালে যাত্রী আসতে দেখা গেছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরমের কারণে সম্ভবত দূরপাল্লার ভ্রমণ এড়াতে চাইছেন যাত্রীরা। তাই সন্ধ্যার পর থেকে তারা টার্মিনালে আসা শুরু করেছেন।

গাবতলী বাস টার্মিনালে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে তেমন যাত্রী নেই। বিপরীতে দূরের জেলাগুলো থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো প্রায় যাত্রীভর্তি ছিল।

ঢাকা-রাজবাড়ী ও ঢাকা-কুষ্টিয়ায় চারটি বাস পরিচালনা করে জামান এন্টারপ্রাইজ। এই প্রতিষ্ঠানের কাউন্টার ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাজবাড়ী থেকে আমাদের ৪০ সিটের একটি বাস ২০ জন (স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই সিটে একজন) যাত্রী নিয়ে এসেছে। তবে ঢাকা থেকে সকালে ছেড়ে যাওয়া আমাদের একটি বাসে যাত্রী ছিল মাত্র নয় জন। সন্ধ্যায়ও একটি বাস মাত্র ১০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। যাত্রীর অভাবে আমাদের আরও দুটি বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

‘এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বহু লোকসান গুণতে হবে। এমনিতেই দীর্ঘদিন বাস চালাতে না পারায় আমাদের চালক-সহকারীরা নিদারুণ অর্থকষ্টে দিনযাপন করেছেন। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়, আবার যেন আমরা পুরোদমে যাত্রী পাই।’

ঢাকা-রাজবাড়ীর আগের টিকিট ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা, বর্তমানে ৬০ শতাংশ বর্ধিত হিসেবে ৫৫০ টাকা করে রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

একই কাউন্টারে বসে থাকা বাসচালক আসলাম বলেন, ‘৫১ দিন পর দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এতে আমাদের প্রাণ ফিরে এসেছে। তবে আমাদের দুঃখের দিন এখনো ফুরিয়ে যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির পুরোটা সময়জুড়ে আমাদের অর্থকষ্টে কাটাতে হয়েছে এবং এখনো কাটাতে হচ্ছে। মাঝখানে ঈদের সময় কিছু চালক ও হেলপার ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাস চালিয়ে কিছু উপার্জন করেছেন। তবে সবার সে ভাগ্য হয়নি।’

করোনাকালে পরিবারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাসচালক ও হেলপারদের প্রায় সবাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন জানিয়ে আসলাম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মালিক-শ্রমিক পরিবহন থেকে সামান্য সহায়তা পেয়েছেন। অল্প কিছু হেলপার পেয়েছেন সরকারি টাকা। তবে বেশিরভাগকেই মহামারির পুরোটা সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।’

তিনি জানান, দূরপাল্লার বাসে চালক-হেলপাররা একদিন অন্তর অন্তর ডিউটি করেন। চালকরা প্রতিদিন ১২০০-৮০০ এবং হেলপাররা ৬০০-৮০০ করে টাকা পান।

এখন যদি যাত্রীই ঠিকমতো পাওয়া না যায়, তাহলে তাদের উপার্জনেও টান পড়বে বলে জানান তিনি।

আসলাম বলেন, ‘আসলে আমরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’

এদিকে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীগামী যাত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ঈদের সময় বাড়ি যেতে পারিনি। অবশেষে আজ চালু হওয়ায় বাড়িতে যাচ্ছি।’

তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনা মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন দূরপাল্লার পরিবহন চালু থাকে। এতে দেশবাসী স্বস্তি পাবে, তাদের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

27m ago