ইয়াস’র শক্তি আম্পানের চেয়ে বেশি, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাতের সম্ভাবনা
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আম্পানের চেয়ে শক্তিশালী হবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঝড়ের মূল অংশ যাবে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে। যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের রেডিয়াস অনেক বড় থাকে, তাই আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও সুন্দরবনের ওপরেও কিছুটা আসবে। আগামীকাল ভোররাত থেকে বা সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হবে। সারা দেশেই বৃষ্টি হবে, তবে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আম্পানের চেয়ে বাতাসের গতি বেশি হবে। ১৯৯১ সালের ঝড়ে আমাদের ক্ষতি বেশি হয়েছিল জোয়ারের কারণে। এ ছাড়া, আমাদের সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণের জেলাগুলো নিচু ভূমি হওয়ায় ক্ষতি হয়। এবারও পূর্ণিমা থাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে। যে কারণে স্থানীয় প্রশাসন উপকূলবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকালও দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা স্থানীয়ভাবে মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে গরম কমেনি। আজও বিকেলের পরে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে— বৃষ্টি কিছুটা প্রশান্তি আনবে।’
‘ভারতে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তা নির্ভর করছে জোয়ারের সময় নাকি ভাটায় ঝড়টি স্থলভাবে আছড়ে পড়বে তার ওপর। এ ছাড়া নিম্ন ভূমিতে আছড়ে পড়লে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে’— বলেন বজলুর রশীদ।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর মনে করছে, পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৪৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও উত্তর ২৪ পরগনাতেও ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১০০ কিলোমিটার।
কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থলভাগে আঘাত করার পরে ইয়াস ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যাবে— সম্ভাব্য গতিপথ তেমনই বলছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজকের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১০ অনুযায়ী, ঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানানো হয় পূর্বাভাসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকরে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোতে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
Comments