ভুয়া মাছের খামারি কমাতে কর বাড়াচ্ছে সরকার

আগামী বাজেটে মাছের খামারি ও পোল্ট্রি হ্যাচারিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে মাছ ও পোল্ট্রি থেকে যারা বেশি অর্থ আয় করছেন, ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে তারা কম কর হারের সুবিধা হারাচ্ছেন।
স্টার ফাইল ছবি

আগামী বাজেটে মাছের খামারি ও পোল্ট্রি হ্যাচারিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে মাছ ও পোল্ট্রি থেকে যারা বেশি অর্থ আয় করছেন, ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে তারা কম কর হারের সুবিধা হারাচ্ছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় করা করদাতাদের বর্তমানে ১০ শতাংশ কর দিতে হলেও, আগামী অর্থবছরে তাদের ১৫ শতাংশ কর দিতে হতে পারে। নতুন অর্থবছরে কর সংগ্রহ বাড়ানো এবং কর ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেষ্টার অংশ হিসেবে এভাবে উচ্চ আয়ের ওপর করের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। 

সরকার মাছের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য এ খাতে কর হার কম রেখেছিল। কিন্তু, কম করের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির লোক এ খাতে আয় বেশি দেখিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এনবিআরকে দেওয়া এক চিঠিতে, মাছ ও পোল্ট্রি খামারিসহ আরও অনেক করদাতার রিটার্নে দেখানো আয়ের উৎস যাচাই করে দেখতে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বর্তমানে মাছ, চিংড়ি ও পোল্ট্রি হ্যাচারি এবং মাছের খামার থেকে বছরে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে করমুক্ত থাকা যায়। আরও ১০ লাখ টাকা আয়ে মাত্র ৫ শতাংশ কর দিতে হয়। বছরে যদি এ খাতে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় হয়, তাহলে কর দিতে হয় মাত্র ১০ শতাংশ। বছরে ব্যক্তি পর্যায়ে করের হার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ।  

দেশে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে মাছের উৎপাদন বাড়ানো এবং বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করতে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে প্রথম এ খাতে দুই বছরের জন্য কর ছাড় দেয় এনবিআর। মাছ চাষ থেকে যে কোনো পরিমাণ আয়ের ওপর ৩ শতাংশ কর ছাড় দেওয়া হয়।

এরপরই কর আদায়কারীরা অভিযোগ করেন, কিছু ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ সুযোগের অপব্যবহার করা শুরু করেছেন।

কর আদায়কারীরা বলেন, পুকুরে মাছের পরিমাণ যাচাই করা কঠিন ব্যাপার হওয়ায় এ অপব্যবহার ধরাও কঠিন। ফলে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে মাছ চাষ থেকে যে কোনো পরিমাণ আয় দেখানো সহজ হয়ে যায়। এ অপব্যবহার বাড়তে বাড়তে এমন একটি পর্যায়ে চলে যায় যে, যাদের মাছের খামার নেই, কর ফাঁকি দিতে তারা পর্যন্ত এ খাতে আয় দেখাতে শুরু করেন।

এই অপচর্চা থামাতে এনবিআর ২০১৪ সালের শেষ দিকে কর কম রাখার উদ্যোগটি বাতিল করে দেয়। কিন্তু, বিভিন্ন মহলের চাপে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে আবারও এটি চালু করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এখন বলছেন, তারা এসব খাত থেকে বেশি আয়কারীদের কাছ থেকে কর আদায় করতে চান।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাছের খামারিদের ওপর কোনো করের বোঝা চাপানোর পরিকল্পনা নেই আমাদের।

খুলনার দাকোপের চিংড়ি খামার সুন্দরবন শ্রিম্পসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিকুল ইসলাম জহির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাছ চাষীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে, বীমা কাভারেজ না পাওয়ায় আমরা বিনিয়োগের টাকা উসুল করতে পারি না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো সত্যিকারের মৎস উদ্যোক্তাদের জন্য জন্য বিষয়টি হতাশাজনক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্বল্প আয়ের কারণে আমাদের অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় কর হার বাড়লে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বে।

জালিয়াতির মাধ্যমে কর ফাঁকির ব্যাপারে তিনি তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন কর কর্তৃপক্ষকে।

জনসংখ্যা ও আয় বৃদ্ধির কারণে মাছের বাড়তি চাহিদা মেটাতে দেশে গত দুই দশক ধরে মাছ চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

মৎস বিভাগের তথ্য অনুসারে, ২০০১-০২ অর্থবছরে চার দশমিক ১২ লাখ হেক্টর জায়গাজুড়ে মাছ চাষ হলেও, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চাষের জায়গা দ্বিগুণ হয়ে ৮ দশমিক ২১ লাখ হেক্টর হয়েছে।

এ ছাড়া, ২০০১-০২ অর্থবছরের ৭ দশমিক ৮৬ লাখ টন থেকে তিন গুণ বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন হয়েছে ২৪ দশমিক ৮৮ লাখ টন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদিত ৪৩ দশমিক ৮৮ লাখ মাছের মধ্যে ৫৭ শতাংশ চাষ করা মাছ ছিল। ২০০১-০২ অর্থবছরে এ অনুপাত ছিলো ৪২ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago