চুয়াডাঙ্গায় কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোয়ারেন্টিন সেন্টার। ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গায় একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকা ভারতফেরত বাংলাদেশিদের মানহীন ও পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় আজ ভোররাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সেখানে অবস্থানরতরা।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) খাবার নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাতে এ নিয়ে হৈচৈ হয়েছে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরা প্রায় ৭০০ মানুষ অবস্থান করছেন চুয়াডাঙ্গার চারটি সরকারি ভবন ও কয়েকটি আবাসিক হোটেলের অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন সেন্টারে। এর মধ্যে টিটিসি কেন্দ্রে রয়েছেন ১১৪ জন। তাদের তিন বেলা খাবারের যোগান দেওয়া হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত তিনটি রেস্তোরা থেকে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী থাকা-খাওয়ার সব খরচ বাবদ কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রতিজন ১৪ দিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছেন।

গতকাল বুধবার রাতে ভাতের সঙ্গে দেওয়া মাছ থেকে পচা গন্ধ বের হলে সেখানে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি কেউ কেউ স্থানীয় প্রশাসনের নিয়োগকৃতদের জানান। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় তারা বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে। অনেকে টিটিসি ভবনের জানালা দিয়ে খাবার ফেলে দেন।

এ খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুনিরা পারভীন, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর আমজাদ হোসেন ও পুলিশ কর্মকর্তারা।

তারা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গিয়ে সবাইকে শান্ত করেন।

কোয়ারেন্টিনে অবস্থানরতদের খাবারসহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের এনডিসি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মান যাচাই করে চুয়াডাঙ্গা শহরের তিনটি রেস্তোরাকে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়েছে সরবরাহের কাজ। তদারকিতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। শহরের বড় বাজারের হোটেল আল আমিন, ভোজন বিলাস এবং মেহমান হোটেল থেকে যাচ্ছে তিন বেলার খাবার।’

তিনি দাবি করেন, গতরাতে ১০-১২ জন যাত্রী মাছের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আর কেউ অভিযোগ করেনি।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, খাবার খারাপের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে দুদফা অভিযোগের প্রেক্ষিতে খাবার সরবরাহ প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা হয়।

এনডিসিও বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি জানান, আজ থেকে খাবার সরবরাহ করবে রেডচিলি নামক হোটেল। গতকাল রাতের খাবার সরবরাহকারী মেহমান হোটেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্তের পর প্রয়োজনে হোটেলটি সীলগালা করে দেওয়া হতে পারে বলেও হুশিয়ারি দেন এনডিসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ারেন্টিনে অবস্থানরত একজন বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনে আসার প্রথম দুদিন আমরা ভালোই ছিলাম। এরপর থেকে খাবার নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমত অত্যাচার। তিন বেলা দেওয়া হচ্ছে অখাদ্য, তাও পরিমাণে কম। গতকাল সকাল থেকে দেওয়া খাবার ছাড়া বিগত দিনে সরবরাহকৃত খাবারের প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিল না কোনো রেস্তোরাঁর নাম।’

তার এই কথার প্রতিধ্বনি করেন সেখানে থাকা আরও কয়েকজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফোনে বলেন, ‘গতকাল দুপুরে যে মুরগির মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল সেটাও খাওয়া যায়নি। রাতে দেওয়া হয় পচা মাছ। খেতে না পেরে প্রতিবাদ করেছে সবাই। অনেকেই খাবারের প্যাকেট ছুঁড়ে দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দিকে।’

তিনি জানান, অনলাইনে পছন্দের খাবার নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। পছন্দ মতো কিছু নিয়ে আসাও নিষেধ।

তার ভাষায়, কোয়ারেন্টিন সেন্টারকে অপরাধখানা বানিয়ে ফেলেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এরমধ্যেও জরুরি চিকিৎসা নিতে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে স্থলপথে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। কারণ সেখানেও চলছে লকডাউন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে পড়া ওই বাংলাদেশি যাত্রীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। গত ১৭ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাসহ দেশের তিনটি স্থলসীমান্ত ও চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেন তারা।

গতকাল পর্যন্ত মোট ৬৮১ জন ফিরেছেন এই চেকপোস্ট দিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

5h ago