‘ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ নিয়ে টুইটারের উদ্বেগ
‘ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার।
বিবিসি জানায়, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের একটি টুইটে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ লেবেল বসায় টুইটার। এরপরই দিল্লি পুলিশ টুইটারের কার্যালয় পরিদর্শন করে একটি নোটিশ দিয়েছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য ভারতের নতুন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা নিয়ে সরকার ও ডিজিটাল সংস্থাগুলোর মধ্যকার দ্বন্দের মধ্যেই এমনটি ঘটেছে। সম্প্রতি বিজেপির নেতারা টুইটারে একটি নথির স্ক্রিনশট শেয়ার করে দাবি করেন যে, মহামারি নিয়ে বিজেপি সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের জন্য প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
কংগ্রেস টুইটারের কাছে অভিযোগ করে যে, ওই নথিগুলো নকল। এর পরেই টুইটার সম্বিত পাত্রসহ অন্যান্যদের টুইটে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ লেবেল বসায়।
টুইটারের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পোস্টে মিডিয়া (ভিডিও, অডিও ও ছবি) প্রতারণামূলকভাবে পরিবর্তন বা এডিট করে সংযুক্ত করলে তাতে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ লেবেল বসানো হয়।
বৃহস্পতিবার টুইটারের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনার পর এই মুহSর্তে আমরা ভারতে আমাদের কর্মী এবং যাদেরকে আমরা সেবা দিচ্ছি তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশ্বব্যাপী আমাদের পরিষেবার শর্তগুলো (টার্মস অব সার্ভিসেস) কার্যকর করার কারণে পুলিশ কর্তৃক ভয় দেখানোর কৌশল ব্যবহার, এর পাশাপাশি নতুন আইটি নীতিমালার মূল উপাদানগুলো নিয়ে ভারত ও বিশ্বজুড়ে নাগরিক সমাজের অনেকের সঙ্গে আমরাও উদ্বিগ্ন।’
সোমবার দিল্লি পুলিশ জানায়, সম্বিত পাত্রের টুইটে ‘কোন নিয়ম মেনে লেবেল দেওয়া হয়েছে’ এমন অভিযোগ পাওয়ার পর তারা এই সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নোটিশ দেওয়ার জন্য টুইটার অফিসে গিয়েছিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে, ভারত সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে ডিজিটাল কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নতুন নির্দেশিকা প্রবর্তন করে। নতুন নিয়মের অধীনে, পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী আছে এমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার, একজন নোডাল কন্ট্যাক্ট অফিসার ও একজন রেসিডেন্ট গ্রেইভেন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।
এছাড়াও, আদালত বা সরকার কোনো নির্দিষ্ট পোস্টের ব্যাপারে জানতে চাইলে সেগুলোর উৎস সম্পর্কে জানাতে হবে। এই নিয়মগুলো প্রয়োগ করতে টুইটার, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল।
বুধবার, হোয়াটসঅ্যাপ এই নির্দেশিকা নিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারা দাবি করছে, এই নির্দেশিকা তাদের মেসেজিং পরিষেবার যে গোপনীয়তা সুরক্ষা আছে সেটি লঙ্ঘন করতে বাধ্য করবে।
টুইটার জানায়, ‘প্ল্যাটফর্মের বিষয়বস্তুর জন্য কোনও ব্যক্তিকে (কমপ্লায়েন্স অফিসার) ফৌজদারীভাবে দায়বদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা, সক্রিয় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও আমাদের গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়ার যে আইনী অধিকার কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে সেটি উদ্বেগজনক।’
টুইটার আরও জানায়, এটি প্রকৃতপক্ষে কর্তৃপক্ষের বিপজ্জনক কর্তৃত্বকে প্রকাশ করছে যা মুক্ত, গণতান্ত্রিক নীতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
টুইটার ভারত সরকারকে এ নির্দেশিকা বাস্তবায়নের জন্য কমপক্ষে আরও তিন মাসের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।
টুইটারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত রাখবো। এক্ষেত্রে একটি সহযোগিতামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা নির্বাচিত কর্মকর্তা, শিল্প এবং নাগরিক সমাজ- সবারই সম্মিলিত দায়িত্ব।’
এপ্রিল মাসে ভারত সরকার দেশটিতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে পোস্ট করা কয়েকটি টুইট সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, টুইটার সেগুলো মেনেও নিয়েছিল।
এই বছরের শুরুতে, কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পর টুইটার বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টকে ব্লকও করছে। সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে ভারতে নতুন কৃষি আইন সংস্কারের দাবিতে চলমান কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়েছিল।
বিবিসি জানায়, ভারত সরকারের আদেশ না মানলে ভারতে টুইটারের কর্মীদের এমনকি কারাগারেও পাঠানো হতে পারে বলে টুইটারকে জানানো হয়েছিল।
Comments