তাসকিনের ৪ উইকেট, শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ করতে দিল না বাংলাদেশ

taskin 4 wkts
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তিন দফা বেঁচে গিয়ে অধিনায়ক কুসল পেরেরা তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তিনটি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে যে দারুণ ভিত তিনি গড়ে দিলেন, না পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলেন তা শ্রীলঙ্কার পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। তাসকিন আহমেদ ওপেনিং জুটি ভেঙে জোড়া আঘাত দেওয়ার পরও ধরে রাখলেন ছন্দ। তার নৈপুণ্যের পাশাপাশি বাকিদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে লঙ্কানদের ৩০০ রানের নিচে আটকে দিল বাংলাদেশ। 

শুক্রবার সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান করেছে শ্রীলঙ্কা। শেষ ১০ ওভারে হাতে ৬ উইকেট থাকলেও মাত্র ৬৯ রান করতে পারে তারা। ইনিংসের শেষ ওভারে শরিফুল ইসলাম ১৮ রান না দিলে তাদের সংগ্রহ হতো আরও কম। পেরেরার ব্যাট থেকে আসে ১২০ রান। ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ৪ উইকেট নেন ডানহাতি পেসার তাসকিন। 

প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ওপেনিং জুটি বড় হয়নি। এ ম্যাচে বদলে যায় চিত্র। প্রথম ওভার থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিলেন তাদের দুই ওপেনার। শরিফুলের করা ইনিংসের প্রথম বলেই পয়েন্টে বাউন্ডারি আনেন দানুশকা গুনাথিলাকা। তৃতীয় বলে আবারও চার। এবারে পেরেরা পয়েন্ট দিয়ে বল করেন সীমানাছাড়া।

নিজের পরের ওভারেও তোপের মুখে পড়েন পেসার শরিফুল। ২ ওভারে ১৭ রান দেওয়ায় তাকে সরিয়ে নেওয়া হয় আক্রমণ থেকে। দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও লঙ্কানদের রানার চাকায় লাগাম টানতে পারেননি।

প্রথম স্পেলে মিরাজ ৫ ওভারে দেন ৩০ রান। মোসাদ্দেকের ২ ওভার থেকে গুনাথিলাকা ও পেরেরা তোলেন ১৮ রান। তাসকিনও প্রথম ওভারে সুবিধা করতে পারেননি। গুনাথিলাকা চার-ছয় মেরে আনেন ১২ রান। ফলে পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৭৭ রান।

নিজের পরের ওভারেই শ্রীলঙ্কার ৬৮ বলে ৮২ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন তাসকিন। ৩৩ বলে ৩৯ করে ইনসাইড এজে বোল্ড হন বাঁহাতি গুনাথিলাকা। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ১ ছয়। তিন বল পর আবারও তাসকিনের আঘাত। আগের দুই ম্যাচে রান না পাওয়া পাথুম নিশানকা এবার খুলতেই পারেননি রানের খাতা। ৩ বলে শূন্য রানে তিনি ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে।

বাংলাদেশের চালকের আসন দখলের আভাস স্থায়ী হয়নি। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় জমে যায় পেরেরা ও কুসল মেন্ডিসের তৃতীয় উইকেট জুটি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই ৮০ বলে ৬৯ রানের জুটির ইতি টানেন তাসকিন। ঝুঁকি নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে মেন্ডিস ক্যাচ দেন মিড অফে। তার সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ হয় ৩৬ বলে ২২ রানে।

এরপর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি পেরেরা। ৯৯ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু তার এই অর্জনের পথে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ফেলেন তিন তিনটি ক্যাচ! ব্যক্তিগত ৬৬ রানে শর্ট থার্ড ম্যানে মোস্তাফিজুর রহমানের ও ৭৯ রানে মিড অনে আফিফ হোসেনের হাত থেকে বেঁচে যান পেরেরা। দুইবারই বোলার ছিলেন সাকিব আল হাসান।

৯৯ রানে দাঁড়িয়েও জীবন পান পেরেরা। মোস্তাফিজের বলে মিড অফে মাহমুদউল্লাহ যে সহজ ক্যাচ ফেলেন, তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা কঠিন! পরের বলেই সিঙ্গেল নিয়ে মাইলফলকে পৌঁছে বাংলাদেশের হতাশা আরও বাড়ান পেরেরা।

লঙ্কানদের সংগ্রহ ২০০ পেরিয়ে যায় ৩৬তম ওভারে। শেষদিকে ঝড় তুলে স্কোর ৩০০ ছাড়িয়ে আরও দূরে নেওয়ার মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। কিন্তু প্রত্যাশিত ঝড় পায়নি সফরকারীরা। আগের ভুলে প্রলেপ দিতেই কীনা মাহমুদউল্লাহ অসাধারণ এক ক্যাচে বিদায় করেন পেরেরাকে। দলীয় ২১৬ রানে শরিফুলের বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ১২২ বলে ১২০ রান। তার ইনিংসে ছিল ১১ চার ও ১ ছয়।

ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে পেরেরা জুটি ছিল ৬৫ রানের। তবে জুটিতে ধনঞ্জয়া ছিলেন খুবই মন্থর। পরেও হাত খুলে খেলতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৭০ বলে ৫৫ রানে। তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি চার।

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত নিরোশান ডিকভেলা একাদশে ফিরে উপযুক্ত পরিবেশ পেলেও ঝড় তোলার আগেই ফেরেন। সরাসরি থ্রোতে তাকে সাজঘরে পাঠান শরিফুল। প্রথম ওয়ানডেতে আগ্রাসন চালানো হাসারাঙ্গা ডি সিলভাও পারেননি বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হতে। তাকেও ছেঁটে ফেলেন তাসকিন। সবমিলিয়ে ৯ ওভারে ৪৬ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (গুনাথিলাকা ৩৯, পেরেরা ১২০, নিশানকা ০, মেন্ডিস ২২, ধনঞ্জয়া ৫৫*, ডিকভেলা ৭, হাসারাঙ্গা ১৮, রমেশ ৮*; শরিফুল ১/৫৬, মিরাজ ০/৪৮, মোসাদ্দেক ০/৩২, তাসকিন ৪/৪৬, মোস্তাফিজ ০/৪৭, সাকিব ০/৪৮)।

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

31m ago