যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তি: আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সেফগার্ডস নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সুরক্ষা বলয়ের জন্য পারমাণবিক পরীক্ষার ফ্রিকোয়েন্সি পরিচালনার মানদণ্ডগুলো সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা জানান, এই অস্ত্রগুলো সামরিক কাজে ব্যবহার করা হবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনভিত্তিক ননপ্রলিফেরেশন পলিসি এডুকেশন সেন্টার (এনপিইসি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানিয়েছে যে, আইএইএ পুনঃনির্দেশিত পারমাণবিক পরিমাণ শনাক্ত করার জন্য দীর্ঘ ও পুরনো বেঞ্চমার্ক ব্যবহার করছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
দুই বছরের বেশি গবেষণা শেষে আগামী দশকে পারমাণবিক চুক্তি যাচাই-বাছাই করে কী বিষয়ে জোরদার করতে হবে, সে বিষয়ে এনপিইসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওিএ) নামে পরিচিত ইরানের নিউক্লিয়ার প্যাক্টে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে আসার সবশেষ আলোচনা বিষয়েও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনপিইসি’র নির্বাহী পরিচালক হেনরি সোকলস্কি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক চুক্তির মধ্যস্থতাকারীরা যাতে ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারে, তেমন একটি বিষয় প্রতিবেদনে হাইলাইট করা হয়েছে। যেমন: বোমা তৈরিতে কী পরিমাণ পারমাণবিক উপাদান লাগে এবং সেই পরিমাণ শনাক্ত করতে চুক্তিটি তদারকি করছে কিনা, তা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।’
আইএইএ’র ‘গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণের (এসকিউ) মানদণ্ডগুলো হলো- আট কেজি প্লুটোনিয়াম এবং ২৫ কেজি উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ১০ থেকে ২০ কিলো টনের বোম তৈরিতে যথেষ্ট। এটি জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা বোমার শক্তির পরিসীমা।
এনপিসি তার প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এই এসকিউ মানগুলো ‘কেবল পুরানো নয়, তা মারাত্মকভাবে অপ্রচলিত’, কারণ এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রের নকশার ওপর ভিত্তি করে ১৯৭৭ সালে আইএইএ দ্বারা গৃহীত হয়েছে।
সোকলস্কি বলেন, ‘আইএইএ যদি তার এসকিউ মানগুলোকে কমিয়ে ফেলে, তবে এটিকে তার পারমাণবিক পরিদর্শনগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো উচিত।’
এটি ব্যয়বহুল হবে এবং বাধার মুখে পড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের অবসরপ্রাপ্ত পরমাণু পদার্থবিদ এবং পারমাণবিক কর্মসূচির সাবেক পরিচালক টমাস কোচরান জানান যে, আইএইএ আট কেজি প্লুটোনিয়াম এবং উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের জন্য যে মানদণ্ড ঠিক করেছে, তা কিছুটা কমানো উচিত।
তিনি বলেন, ‘এসকিউ মানগুলো ৭০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে প্রচলিত ছিল। ৭৫ বছরে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়ে মানুষজন আরও স্মার্ট হয়ে উঠেছে।’
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আইএইএ কেন তার এসকিউ হ্রাস করেনি জানতে চাইলে এজেন্সিটির মিডিয়া প্রধান ফ্রেডরিক দহল ইমেলের মাধ্যমে জানায়, ‘যদিও এসকিউ মান পরিবর্তন হয়নি, তবে আইএইএ’র অধীনে প্রয়োগ করা সুরক্ষা ব্যবস্থা ও উদ্যোগগুলো একটি বিস্তৃত সেফগার্ডস চুক্তি (সিএসএ) এবং প্রযোজ্য একটি অতিরিক্ত প্রোটোকল (এপি) যথাসময়ে পারমাণবিক উপাদানের স্বল্প পরিমাণ, যেমন: এক এসকিউ এরও কম শনাক্ত করতে সক্ষম।’
তবে সোকলস্কি উল্লেখ করেছেন যে, ইরান সুরক্ষার চুক্তিতে একটি পরিপূরক উপাদান হিসেবে অনুমতি দেবে এমন কোনো অতিরিক্ত প্রোটোকলে এখনো সম্মত হয়নি।
সোকলস্কি বলেন, ‘যদি এজেন্সি কোনো অস্ত্রের প্লুটোনিয়াম বা উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রতিরোধে কঠোর হয়, তবে এই পরিমাণগুলো আসলে কী ছিল সেই সম্পর্কে সৎ থাকা দরকার। তা জানতে এবং সত্যিকারের নজরদারি রাখতে আইএইএকে সৎ ব্যক্তির হাতে থাকতে হবে। এর আশপাশে কোনো হৈচৈ করা যাবে না।’
Comments