মাদকবিরোধী সভা করায় ব্যবসায়ীকে হত্যা: যুবলীগ নেতা কাউসারসহ কারাগারে ৭

Brahmanbaria_Kawsar & Victim Nasir_File photo-1.jpg
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়া ও নিহত ব্যবসায়ী আবু নাছির। ছবি: সংগৃহীত

মাদকবিরোধী সভা করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু নাছিরকে পিটিয়ে হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়াসহ সাত জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ পারভেজ আসামিদের জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেছেন বলে জানান আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে মাদকপাচারে জড়িত উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার ভূঁইয়া চক্রের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ মে বিকালে গ্রামের ৬০-৬৫ জন মুরুব্বি ও যুবকদের নিয়ে স্থানীয় হুমায়ূন কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাদকবিরোধী সভার আয়োজন করেছিলেন ওই উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া গ্রামের আবু শামার ছেলে আবু নাছির। সভা থেকে গ্রামের ওপর দিয়ে মাদকপাচার করতে দেওয়া হবে না বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন ২৪ মে সকালে নাসিরের দাদী মারা গেলে তিনি কাফনের কাপড় কিনতে আউলিয়া বাজারে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে নজরপুর গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে আগে থেকে ওত পেতে থাকা কাউসারসহ ১২-১৪ জন গতিরোধ করে তাকে লোহার রড ও শাবল দিয়ে বেধড়ক পেটায়। তিনি লুটিয়ে পড়লে হামলাকারীরা মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। কাজল নামের এক ব্যবসায়ী তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আউলিয়া বাজারে নিয়ে যাওয়ার পর অন্য ব্যবসায়ীরা তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় রেনেসাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ২৯ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাছির মারা যান।

নাছির মারা যাওয়ার আগে ২৪ মে রাতে তার বাবা বাদী হয়ে কাউসারকে প্রধান আসামি করে নয় জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন‌। মারা যাওয়ার পর কাউসারসহ ১৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

নিহত নাছিরের পরিবারের সদস্যরা জানান, চলতি বছরের ২ মার্চ মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউসারসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন।

তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ার কারণে এতোদিন কাউসারসহ অন্য আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও একই গ্রামের বাসিন্দা বাসির মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে আবু কাউসার ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে মাদকপাচার করছেন। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তিন বছর আগে (২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট) সে আমার ওপর হামলা চালায়। সেদিন বিজয়নগর উপজেলা পরিষদে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় গোয়ালনগর সড়কে কাউসার ও তার বাহিনীর লোকেরা আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চাপ সৃষ্টি করে ঘটনাটির আপোষ-মীমাংসা করেন।’

আরও পড়ুন:

মাদকবিরোধী সভা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাদক কারবারিদের হামলা

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন নাছির

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

32m ago