তপুর গোলে আফগানিস্তানের সঙ্গে ড্র করল বাংলাদেশ
ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় খেলা হলো বাংলাদেশের অর্ধে। আফগানিস্তান বল দখলে প্রাধান্য দেখানোর পাশাপাশি আক্রমণেও করল আধিপত্য। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এগিয়ে গেল তারা। তবে হাল ছেড়ে দিল না জেমি ডের শিষ্যরা। শেষদিকে তপু বর্মনের দারুণ লক্ষ্যভেদে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে আফগানদের সঙ্গে ড্র করল তারা।
বৃহস্পতিবার কাতারের দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচটি শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফরোয়ার্ড আমির শরিফির গোলে এগিয়ে যায় আফগানিস্তান। নির্ধারিত সময়ের ছয় মিনিট আগে বাংলাদেশের পক্ষে গোল শোধ করেন ডিফেন্ডার তপু।
ম্যাচের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকে আফগানিস্তান। তবে প্রথমার্ধে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। তাদের আক্রমণগুলো বাংলাদেশের রক্ষণভাগে গিয়ে বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে। পাল্টা-আক্রমণে লাল-সবুজের প্রতিনিধরাও ভীতি ছড়ায় প্রতিপক্ষের রক্ষণে। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে চাপ বাড়ায় আফগানরা। তবে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে রুখে দিয়ে পয়েন্ট পাওয়ার স্বস্তি মিলেছে জামাল ভূঁইয়াদের।
যৌথ বাছাইপর্বে ৬ ম্যাচে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় ড্র। ২ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে পাঁচ দলের পয়েন্ট তালিকার সবার নিচে। ২০১৯ সালে দুশানবেতে আফগানদের কাছে ১-০ গোলে হেরে বাছাইপর্ব শুরু করেছিল তারা।
১৫তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম দল হিসেবে গোলমুখে শট নেয় বাংলাদেশ। ৩৫ গজ দূর থেকে ডিফেন্ডার তপু বর্মনের নেওয়া শট লুফে নিতে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি আফগান গোলরক্ষক ওভাইস আজিজিকে। পরের মিনিটে মাসুক মিয়াঁ জনি অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে পড়লেও তার পাস খুঁজে পায়নি কোনো সতীর্থকে।
তিন মিনিট পর গোলের সুযোগ তৈরি করে আফগানরা। ফরোয়ার্ড আমির শরিফি সেভ আদায় করে নেন আনিসুর রহমান জিকোর কাছ থেকে। ডি-বক্সের ডান দিক থেকে নেওয়া তার শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে কিছুটা দিক পাল্টায়। এরপর পা দিয়ে ঠেকিয়ে বল বিপদমুক্ত করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক।
২৮তম মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ। তবে জামাল ভূঁইয়ার ক্রস অনায়াসে ফিরিয়ে দেন আফগান ডিফেন্ডাররা। ৩৩তম মিনিটে আবারও ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন জিকো। আফগানিস্তানের অধিনায়ক ফারশাদ নূরের কাছের পোস্টে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন তিনি।
পাঁচ মিনিট পর বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড মতিন মিয়াঁ শট নিয়েছিলেন গোলমুখে। তবে তা পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়। ফলে গোলশূন্যভাবে বিরতিতে যায় দল দুটি।
ফের খেলা শুরুর পরপরই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৪৮তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে ডেভিড নাজেমের পাসে বাঁ পায়ের আলতো টোকায় দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান শরিফি।
সাত মিনিট পর সোহেল রানার পরিবর্তে মাঠে নামেন মানিক মোল্লা। ৭২তম মিনিটে জনির জায়গায় জুয়েল রানা ও বিপলু আহমেদের জায়গায় মেহেদী হাসান রয়েল এবং ৭৮তম মিনিটে রাকিব হোসেনের বদলি হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও রহমত মিয়াঁর বদলি হিসেবে রিমন হোসেনকে নামানো হয়।
৮০তম মিনিটে সমতায় ফেরার দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। মানিকের বাড়ানো বল খুঁজে পেয়েছিলেন আবদুল্লাহ। তবে বেশ কঠিন জায়গা থেকে তার নেওয়া শট আফগানিস্তানের গোলরক্ষক ওয়াইস আজিজির পায়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
চার মিনিট পর আসে বাংলাদেশের উল্লাসের মুহূর্ত। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলে রিয়াদুল হাসান রাফি হেড করে বাড়ান তপুর উদ্দেশ্যে। তিনি প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর শরীর ঘুরিয়ে ডান পায়ের অসাধারণ এক শটে খুঁজে নেন জালের ঠিকানা। এবারের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের আগের দুই গোলদাতা ছিলেন সাদ উদ্দিন ও বিপলু।
গোল হজমের পর মরিয়া হয়ে ওঠে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৪৯তম স্থানে থাকা আফগানিস্তান। তবে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও তারা নিশানা ভেদ করতে পারেনি। র্যাঙ্কিংয়ের ১৮৪তম স্থানে থাকা বাংলাদেশের মতিনও একটি সুযোগ করেন হাতছাড়া।
এ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছে দুজনের। ফিনল্যান্ড প্রবাসী ডিফেন্ডার তারিক কাজী শুরু থেকেই খেলেন। তার পারফরম্যান্স ছিল বেশ আশা জাগানিয়া। তবে আরেক অভিষিক্ত ফরোয়ার্ড জুয়েল নজর কাড়তে পারেননি।
আগামী ৭ জুন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। ১৫ জুন বাছাইপর্বের সবশেষ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওমান।
Comments