বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘লাল দরজা’য় অভিনয় আমার সেরা কাজের একটি: চম্পা

ভারতের সদ্য প্রয়াত প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের আলোচিত লাল দরজা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন চম্পা। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে ডেইলি স্টারের কাছে ১৯৯৭ সালের সেই ছবি নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেত্রী।
ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

ভারতের সদ্য প্রয়াত প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের আলোচিত লাল দরজা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন চম্পা। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে ডেইলি স্টারের কাছে ১৯৯৭ সালের সেই ছবি নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেত্রী।

চম্পার ভাষায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মতো জ্ঞানী মানুষ এবং জ্ঞানী পরিচালক কমই দেখেছি। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই কিছু শিখতে পারতাম। এটা ছিল আমার জন্য বড় পাওয়া। আমার জন্য অনেক বড় শিক্ষা।

তার লাল দরজা সিনেমায় অভিনয় আমার জীবনের সেরা কাজগুলির একটি। এজন্য নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে করতাম। সব সময় মনে হতো খুব ভালো একটি কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়ালাম। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করত।

শুটিং স্পটে অন্যরকম একজন মানুষ হিসেবে তাকে দেখতাম। কাজ ছাড়া কিছু বুঝতেন না। শতভাগ কাজপাগল মানুষ ছিলেন তিনি। কাজের সময় আড্ডা দেওয়া পছন্দ করতেন না।

একটি ঘটনা শেয়ার করি। একটি ইমোশনাল দৃশ্যের জন্য রেডি হব। তার আগে রুমে বসে হাসাহাসি করছিলাম। এটা দেখে তিনি আমাকে ডেকে বকে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন-এভাবে হাসলে তুমি ইমোশনাল দৃশ্য করবে কেমন করে? ওটাও আমার জন্য একটা শিক্ষা ছিল। পরে মনে হয়েছিল-সত্যিকারের পরিচালক বলেই এমন করে বলেছিলেন।

তারপর লাল দরজা মুক্তি পেল। অনেক সম্মান বয়ে আনল। লাল দরজা অস্কারে নমিনেশন পেয়েছিল। লাল দরজা ভারতে সেরা সিনেমা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতেছিল। আমার সম্মান ছিল লাল দরজার অভিনেত্রী হিসেবে।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত আমাকে লাল দরজায় কাস্ট করেছিলেন পদ্মা নদীর মাঝি সিনেমায় আমার অভিনয় দেখে। দিল্লিতে একটি ফেস্টিভালের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তখন আমার ছবি দেখেছিলেন। কলকাতায় ফেরার পর আমার ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করে সরাসরি লাল দরজায় অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমিও কোনো দ্বিধা ছাড়াই রাজি হয়ে যাই।

অভিনয়ের কাজ করার পর ডাবিং নিয়ে একটা স্মৃতি মনে পড়ছে। ডাবিং চলাকালীন তিনি বলে দিয়েছিলেন—সাত সকালে কারও সঙ্গে কথা না বলে ডাবিং করতে আসবে। এতে কণ্ঠ ভালো থাকবে। আরও বলতেন—সকালবেলা ইমোশনের সংলাপগুলো কারও সঙ্গে কথা না বলে ডেলিভারি দিলে অন্যরকম আসে।

আসলে এইরকম করে কেউ কখনো বলেননি আমাকে। পরে বুঝেছিলাম বড় মাপের পরিচালকরা বুঝি এমনই হন।

লাল দরজা সিনেমার শুটিং চলাকালীন বাপ্পী লাহিড়ী এসেছিলেন। তারপর জেনেছিলাম বাপ্পী লাহিড়ী ছিলেন লাল দরজার প্রযোজক।

করোনা শুরু হওয়ার পরও কয়েকবার তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে আমার। সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতেন বলতেন। পরামর্শ দিতেন। কিছুদিন আগেও কথা বলেছি। অনেকটা সময় গল্প করেছি। আফসোস শেষ দেখাটা হলো না।

তার সঙ্গে ছিল আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তার মেয়ে ও আমার মেয়ে কানাডায় একসঙ্গে পড়ালেখা করেছে। এজন্য তিনি ভীষণ খুশি ছিলেন। আমার মেয়ের খোঁজ নিতেন সব সময়।

আমি কলকাতায় গেলেই তার বাসায় যেতাম। দেখা করতাম। অনেক আদর করতেন আমাকে। দিদি সম্বোধন করতেন। মানুষকে সম্মান দিতে জানতেন।

সবশেষ বলব—সকালবেলা থেকে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে তার মৃত্যুরে খবর শুনে। এইরকম মানুষ সচরাচর আসেন না। কালেভদ্রে জন্ম নেন।

Comments

The Daily Star  | English

Singapore’s Financial Intelligence Unit seeks information on S Alam Group

The overseas assets of S Alam Group, including those in Singapore, came under scrutiny following recent media reports.

40m ago