নদীভাঙনে বিলীন হতে পারে ২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুসারে, চলতি বছর প্রায় ২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) নামের এই গবেষণা সংস্থার তথ্য বলছে, অন্তত ১৩টি জেলায় যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর ভাঙন এবার তীব্র হবে।
২০২০ সালে অন্তত ২৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
সিইজিআইএসের ‘রিভারব্যাংক ইরোশন প্রেডিকশন ফর ২০২১’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ভাঙনের সবচেয়ে বড় শিকার হতে যাচ্ছে মাদারীপুর জেলা। সামনের মাসগুলোতে এই জেলার নয় দশমিক ৫৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা অন্য জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, রাজশাহী ও ফরিদপুর।
এর মধ্যে টাঙ্গাইলে প্রায় পাঁচ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গাইবান্ধা ও রাজবাড়ীর জন্য অনুমিত হিসাব যথাক্রমে দুই দশমিক ৯১ বর্গ কিলোমিটার ও দুই দশমিক ৮৮ বর্গ কিলোমিটার।
নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর নদী ভাঙনের কারণে দেশের হাজারো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েন।
সিইজিআইএস সতর্ক করে বলেছে, গত বছর নদী ভাঙনের পেছনে লাগাতার ও দীর্ঘমেয়াদী বন্যার একটা ভূমিকা ছিল। চলতি বছরেও এর প্রভাব থাকতে পারে।
সংস্থাটির রিভার, ডেলটা অ্যান্ড কোস্টাল মরফোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট স্পেশালিষ্ট সুদীপ্ত কুমার হোড় আগের বছরের বন্যাকে অভিহিত করেন চরম দুর্যোগ হিসেবে। তার মতে, এই ধরনের বন্যা অনেক এলাকা ভাসিয়ে নেয়। যা নদী তীরবর্তী জায়গাগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
সুদীপ্ত কুমার হোড় বলেন, ‘এ কারণে চলতি বছর ভাঙনের তীব্রতা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মার এই ভাঙনের পূর্বাভাসের জন্য সিইজিআইএস নিজেদের উদ্ভাবিত একটি টুল ব্যবহার করেছে, যা স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে কাজ করে থাকে।
২০০৪ সাল থেকে দেশের প্রধান তিনটি নদীর ভাঙন ও ভূমিরূপ পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন।
সিইজিআইএসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর ভাঙনের কারণে প্রায় তিন দশমিক সাত কিলোমিটার বাঁধ ও আধা কিলোমিটার সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভাঙনের ব্যাপারে আগের বছর যে ধারণা করা হয়েছিল তা অনেক ক্ষেত্রে মিলে গেছে। এরপরেও অল্প কিছু জায়গায় ধারণা অনুযায়ী ভাঙন হয়নি। তবে সব মিলিয়ে প্রেডিকশন টুলের যথার্থতা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।’
চলতি বছরের প্রতিবেদন অনুসারে, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা তীরের ২০টির মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।
এর মধ্যে যমুনার পাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গার সংখ্যা ১৪টি। এ ছাড়া গঙ্গার পাড়ে পাঁচটি ও পদ্মার পাড়ে একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে ভাঙনের কবল থেকে নদী পাড়ের সম্পদ রক্ষার বিষয়টি অনেক ব্যয়সাধ্য একটি ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামোর পাশাপাশি ভাঙনের পূর্বাভাসের মতো অ-কাঠামোগত পদ্ধতির সমন্বয়ে নেওয়া ব্যবস্থা ক্ষতি কমিয়ে আনার সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে পারে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতির ব্যাপারে অবগত আছি। এ জন্য গত এপ্রিল থেকে কাজ করছি। সাইক্লোন ইয়াসে কিছু বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। আমরা সেগুলো মেরামতের কাজ শুরু করেছি।’
তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও ক্ষতি সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে তৎপর আছে।
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ।
Comments