বরগুনার আমতলীতে ৭ সেতুর বেহাল দশা

১৯ গ্রামের অর্ধ লাখ মানুষের ভোগান্তি
গাজীপুর খালের ওপরের সেতুটি গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাঝখানের ৪টি পিলারসহ দেবে যায়। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

সংস্কারের অভাবে বরগুনার আমতলী উপজেলার ১৯ গ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী সাতটি লোহার সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে পাঁচটি সেতুর মাঝখানের ঢালাই ধসে গর্ত হয়ে গেছে, দুটি সেতু দেবে গেছে। এইসব সেতু দিয়ে এসব গ্রামের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালের ওপর সেতুটি মঙ্গলবার সকালে মাঝখানের ৪টি পিলারসহ সেতুটি দেবে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে গাজীপুর, গেরাবুনিয়া, সোনাখালী, দরিটানা, পশ্চিম সোনাখালী ও আমতলাসহ ৮ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০০৮ সালে এ লোহার সেতুটি নির্মাণ করে। স্থানীয় হুমায়ুন কবির জানান, ‘সেতুটি দেবে যাওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।

২০১১ সালে হলদিয়া হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন চাওড়া খালের ওপর ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি একটি লোহার সেতু নির্মাণ করে। এই সেতু পারাপার হয়ে প্রতিদিন হলদিয়া, গুরুদল, উত্তর তক্তাবুনিয়া, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আমতলী উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। সংস্কারের অভাবে সেতুটি গত মে মাসে মাঝ বরাবর দুই জায়গায় বড় গর্ত হয়ে রড বেড়িয়ে গেছে।

চাওড়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটির মাঝখানে গত মে মাসে ঢালাই ধসে বড় গর্তের তৈরি হয়। ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন মানুষ। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

হলদিয়া গ্রামের শানু মোল্লা জানান, সেতুর মাধ খান দিয়ে সিমেন্টের ঢালাই পড়ে যাওয়ায় এখন আর যানবাহন চলতে পারে না। ধান, চাল, ডাল বিক্রির জন্য রিকশায় করে এ সেতু দিয়ে আমতলী বাজারে নিতে পারতাম কিন্তু এখন পারি না। গর্ভবতী মা কিংবা মুমূর্ষ রোগীদের হাসপাতালে নিতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ।

চাওড়া খালের ওপর রাঢ়ী বাড়ির সামনে এলজিইডি একই সময়ে আরেকটি সেতু নির্মাণ করে। ওই সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুটির গত বছরের ডিসেম্বরে মাঝ বরাবর ঢালাই ধসে কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে তক্তাবুনিয়া, পূর্ব চন্দ্রা, লক্ষ্মী গ্রামের কয়েক প্রায় ১০ হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

তক্তাবুনিয়া গ্রামের রামেশ্বর জানান, ‘ব্রিজটা ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন অনেক কষ্টে চলাচল করতে হয়।’

চাওড়া খালের কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত সেতুটিও চলতি বছরের মে মাসে হঠাৎ দেবে যায়। সে থেকেই ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এতে কাউনিয়া, চলাভাঙ্গা এবং আমতলী ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা এবং পূর্ব মহিষডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

একই ইউনিয়নের লোদা খালের ওপর হাফেজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন সেতুটিরও বেহাল দশা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে সেতুটির উপর দিয়ে মালবোঝাই একটি টমটম যাওয়ার সময় সেতুর মাঝ বরাবর ঢালাই ধসে গর্তের সৃষ্টি হয়। এখনও পর্যন্ত মেরামত না হওয়ায় মানুষ ও যান চলাচল বন্ধ আছে।

একই খালের ওপর লোদা সরকারী বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটিরও একই অবস্থা। বছর খানেক আগে সেতুটির একাংশ ধসে গিয়ে লোহার রড বেড়িয়ে পড়ে। সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তা ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এই সেতু দিয়ে লোদা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন।

চিলা খালের ওপর নির্মিত সেতুটিরও ভগ্নদশা। লোহার এই সেতুটির মাঝ বরাবর অংশ ১০-১২ ফুট ২০১৯ সালে মালবোঝাই ট্রলির ভারে ধসে পড়ে। এর পর সেতুটি কোনো সংস্কার হয়নি।

এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লা আল মামুন জানান, ‘উল্লেখিত ৭টি লোহার সেতুর স্থলে গার্ডার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago