ডি ব্রুইন-লুকাকুর ঝলক, ঘুরে দাঁড়িয়ে বেলজিয়ামের রোমাঞ্চকর জয়
নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারে ডেনমার্ক। জয় অনেক দূরের কথা, তাদের ভাগ্যে জুটল না ড্রও! অথচ পুরোটা সময়ে অসাধারণ ফুটবল খেলল দলটি। ইউসুফ পলসেন, মার্টিন ব্র্যাথওয়েট, জোয়াকিম মায়েলে, পিয়েরে-এমিল হয়বিয়া, মিকেল ডামসগার্ডরা উজাড় করে দিলেন নিজেদের।
বেলজিয়ামের সঙ্গে তবুও পেরে ওঠা গেল না। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলটি উপহার দিল চোখ জুড়ানো ফুটবলের প্রদর্শনী। রোমেলু লুকাকু আর চোট থেকে ফিরে বদলি নামা কেভিন ডি ব্রুইনের ঝলকে তারা পেল রোমাঞ্চকর জয়।
বৃহস্পতিবার রাতে ২০২০ ইউরোতে নিজেদের মাটিতে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছে ডেনমার্ক। পারকেন স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদেরকে উল্লাসে মাতান পলসেন। বিরতির পর বেলজিয়ামকে সমতায় ফেরান থরগ্যান হ্যাজার্ড। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে জয়সূচক গোলটি করেন ডি ব্রুইন।
টানা দুই জয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউটে পা রেখেছে রবার্তো মার্তিনেজের শিষ্যরা। আগের ম্যাচে তারা রাশিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৩-০ গোলে। অন্যদিকে, টানা দুই ম্যাচ হেরে এবারের আসর থেকে বিদায়ের শঙ্কার মুখে পড়েছে স্বাগতিকরা।
গোটা ম্যাচে গোলমুখে ২১টি শট নেয় ডেনমার্ক। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল পাঁচটি। শেষদিকে ক্রসবার বাধা না হয়ে দাঁড়ালে তারা ফিরতে পারত সমতায়। অন্যদিকে, বেলজিয়ানদের ছয়টি শটের পাঁচটিই ছিল লক্ষ্যে। পাশাপাশি বল দখলে প্রাধান্য ছিল তাদের।
প্রতিপক্ষের ভুলে খেলা শুরুর মাত্র ৯৯ সেকেন্ডের মধ্যে এগিয়ে যায় ডেনিশরা। ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম গোলটি করেন পলসেন। বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার জেসন ডেনাইয়ারের পাস মাঝপথে কেড়ে নিয়ে তাকে বল বাড়ান হয়বিয়া। এরপর কোণাকুণি শটে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন আরবি লাইপজিগের এই স্ট্রাইকার।
তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত ডেনমার্ক। কিন্তু দারুণ নৈপুণ্যে ডি-বক্সে ঢোকার পর গোলরক্ষক বরাবর শট মেরে সুযোগ হাতছাড়া করেন মায়েলে। অথচ সেসময় ফাঁকায় ছিলেন বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড ব্র্যাথওয়েট।
দশ মিনিট যাওয়ার পর ডেনমার্কের ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনকে সম্মান জানাতে গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকেন। রেফারি তখন খেলা থামিয়ে দেন। দুদলের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তাদেরকেও হাততালি দিতে দেখা যায়।
গত শনিবার এই স্টেডিয়ামে ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ডের ম্যাচের প্রথমার্ধে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মাটিতে ঢলে পড়েছিলেন এরিকসেন। মাঠেই কিছুক্ষণ চিকিৎসা চলার পর তাকে স্ট্রেচারে করে নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। বর্তমানে ইন্টার মিলানের এই মিডফিল্ডার আছেন সুস্থ হওয়ার পথে।
৩৫তম মিনিটে ডামসগার্ডের শটে রিয়াল মাদ্রিদের তারকা কোর্তোয়া পরাস্ত হলেও বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিরতির আগে রীতিমতো একচ্ছত্র আধিপত্য দেখায় ডেনমার্ক। তাদের নয়টি শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, বেলজিয়াম লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল কেবল একটি শট।
ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে প্রথমবারের মতো ছন্দে দেখা যায় রেড ডেভিলসদের। আর ওই গোছানো আক্রমণেই তারা আদায় করে নেয় গোল। ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার লুকাকু ডানদিক দিয়ে আক্রমণে উঠে ডি-বক্সে ছুটে খুঁজে নেন ডি ব্রুইনকে। এরপর শট না নিয়ে তিনি বল ফেলেন বিপজ্জনক জায়গায়। বাকিটা অনায়াসে সারেন হ্যাজার্ড ভাতৃদ্বয়ের ছোটজন।
৭০তম মিনিটে আবারও পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে লিড নেয় বেলজিয়াম। লুকাকু বল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডেনমার্কের রক্ষণভাগকে খাবি খাওয়ান। এরপর বদলি এডেন হ্যাজার্ড সতীর্থ ইউরি টিয়েলেমান্সের সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে খুঁজে নেন ম্যানচেস্টার সিটির তারকা ডি ব্রুইনকে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নিখুঁত শটে গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মেইকেলকে ফাঁকি দেন তিনি।
পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে ক্যাসপার হিউমান্ডের শিষ্যরা। ৮৪তম মিনিটে গোলমুখে স্লাইড করেও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি ব্র্যাথওয়েট। তিন মিনিট পর তার জোরালো হেডে কোর্তোয়া বোকা বনে গেলেও বল ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে গেলে হতাশায় পুড়তে হয় ডেনমার্ককে।
আগামী সোমবার রাতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ফিনল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম। একই সময়ে অন্য ম্যাচে খেলবে ডেনমার্ক ও রাশিয়া।
Comments