মা, বাবা ও বোনকে হত্যা করেছেন মেহজাবিন: পুলিশ
নিজের মা, বাবা ও বোনকে হত্যা করেছেন মেহজাবিন ইসলাম মুন। রাজধানীর কদমতলীতে একই পরিবারের তিন সদস্য হত্যার ঘটনায় আটক মেহজাবিন ইসলাম মুন সম্পর্কে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী জোনের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তার (মেহজাবিনের) মা তাকে অসামাজিক কার্যকলাপে বাধ্য করেছিলেন। বাবার কাছে অভিযোগ করার পর তিনি এ ব্যাপারে কিছু করেননি। বোন তার কথা শুনতে চায়নি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, মৃত্যুই তাদের একমাত্র শাস্তি।’
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কদমতলীর রজব আলী সরদার রোডের একটি ভবন থেকে সৌদিপ্রবাসী মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪৫) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মা, বাবা ও ছোট বোনকে হত্যার পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন মেহজাবিন নিজেই।
মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম (৪০) ও তাদের পাঁচ বছরের কন্যাকে ফ্ল্যাটে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
মেহজাবিনের চাচা সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে মেহজাবিন ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় একটি মামলা করেছেন।
ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘পরিবারের পাঁচ সদস্যই প্রাথমিকভাবে তার টার্গেট ছিল বলে জানিয়েছেন মেহজাবিন। কিন্তু, তিনি তাদের মধ্যে তিন জনকে হত্যা করেছেন। স্বামী ও মেয়েকেও তিনি হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করেননি।’
জিজ্ঞাসাবাদে মেহজাবিনের কাছে কেন তিনি তার স্বামী ও মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করলেও শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
মেহজাবিন পুলিশকে জানান, তিনি শুরুতে তাদেরকে অচেতন করেছেন। পরে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। প্রথমে মা, পরে বাবাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। সবশেষে বোনকে হত্যা করেছিলেন।
মেহজাবিন পুলিশের কাছে জোর দিয়ে বলেছেন যে, তিনি একাই এই হত্যার পরিকল্পনা করেন।
মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলকেও অচেতন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় শফিকুলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মেহজাবিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘মামলার বিবৃতিতে তার চাচা অভিযোগ করেছেন যে, সম্পত্তির কিছু অংশ তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই বাবা-মাকে চাপ দিচ্ছিলেন মেহজাবিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়টিও তদন্ত করব।’
আজ রোববার ঢাকার একটি আদালত মেহজাবিনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
২০১৬ সালে শফিকুলের সঙ্গে মেহজাবিনের বিয়ে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জের যে এলাকায় এই দম্পতি থাকতেন, সেখানে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। একজন ব্যক্তির সঙ্গে মেহজাবিনের কিছু ছবি ও ভিডিও ফাঁস হওয়ার পরই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই মামলায় মেহজাবিন, তার স্বামী শফিকুল, মা ও এক চাচীকে আসামি করা হয়েছিল। পরে মেহজাবিনকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক চিকিৎসক জানান, তারা ধারণা করছেন যে, ওই তিন জনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। অন্যান্য পরীক্ষার জন্য মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মর্গে মেহজাবিনের খালা সোনিয়া আক্তার অভিযোগ করেছেন, হত্যার পিছনে শফিকুলের হাত আছে। তার দাবি, শফিকুল তার স্ত্রী মেহজাবিনকে নির্যাতন করতেন। হত্যার বিষয়টি স্বীকার করার জন্য মেহজাবিনকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘এক জন নারী কীভাবে তিন জনকে হত্যা করতে পারে?’
Comments