আ. লীগ নেতাদের আশ্বাসে রাবির ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলন স্থগিত
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে চাকরিতে যোগদানের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের শেষ দিনে দেওয়া ‘অবৈধ’ নিয়োগপ্রাপ্তরা।
আজ সোমবার বেলা ৩টায় সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্ত জানান তারা।
জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। আলোচনা শেষে নেতাদের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন নিয়োগপ্রাপ্তরা।
প্রশাসনের পক্ষে আলোচনায় ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলি। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, বর্তমান সহ-সভাপতি ফারুক হাসানসহ ছাত্রলীগের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ১৫ জন নেতা-কর্মী।
প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষে সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘এই নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধানের জন্য আজ একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনা করেছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে যাক। শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হোক।’
নিয়োগপ্রাপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। চাকরির বিষয়ে তারা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাদের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি।’
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থবছরের শেষ ফাইন্যান্স কমিটির সভা হওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে এই সভার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় ২২ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভাও স্থগিত করা হয়।
গত দুই দিন ধরে নিয়োগপ্রাপ্ত পদে যোগদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। গত শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক ভবন, সিনেট ভবন এবং উপাচার্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
এর পরদিন রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে তারা সব ভবনের তালা খুলে দেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে, গত রোববার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতির বিবরণ জানিয়ে, সমাধান চেয়ে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।’
আন্দোলনকারীদের চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘তাদের চাকরিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার বর্তমান প্রশাসনের হাতে নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগ “অবৈধ” ঘোষণা করেছে এবং একইসঙ্গে যোগদান প্রক্রিয়া স্থগিতের ব্যাপারে আমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবস ৬ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে যান। মন্ত্রণালয় সেদিনই এই নিয়োগ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
সে প্রেক্ষিতে ৮ মে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এই ১৩৭ জনের চাকরিতে যোগদান প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরে তদন্ত কমিটি গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে আবদুস সোবহানের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, এ প্রেক্ষিতে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছেন।
আরও পড়ুন:
রাবি প্রশাসন ও উপাচার্য ভবনে তালা দিয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা
রাবির ‘অবৈধ’ নিয়োগের ‘বৈধতা’ চায় নিয়োগপ্রাপ্তরা
মানবিক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ দিয়েছি: সাবেক ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান
রাবিতে এডহক নিয়োগের যোগদান স্থগিত
রাবি উপাচার্যের নিয়োগ দুর্নীতি: ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাবিতে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ অবৈধ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
রাবি উপাচার্যের জামাতার বিরুদ্ধে ‘গোপন নথি’ চুরির অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানগর ও রাবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষ
‘দুর্নীতিবিরোধী’ শিক্ষকদের বাধার মুখে রাবি সিন্ডিকেট সভা স্থগিত
Comments