চলে গেলেন ইমেরিটাস পাবলিশার মহিউদ্দিন আহমেদ

দেশের খ্যাতিমান প্রকাশক ও শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘ইমেরিটাস পাবলিশার’ পদবিপ্রাপ্ত প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার রাতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
মহিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের খ্যাতিমান প্রকাশক ও শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘ইমেরিটাস পাবলিশার’ পদবিপ্রাপ্ত প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার রাতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে ও ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বাবা ২০০২ থেকে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি কোভিডে আক্রান্ত হন ও সেরে উঠেন। তারপর আবার হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়।’ আজ জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে মহিউদ্দিন আহমেদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৮১ সাল থেকে মোট ১৬ বার ইউপিএল ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার’ পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯১ সালে তিনি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। পরিবেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১৭ জন প্রকাশককে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। মহিউদ্দিন ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

২০১৪ সালে ‘বাংলাদেশ অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘ইমেরিটাস পাবলিশার’ পদবি লাভ করেন তিনি। অ্যারিজোনার বেনসনে অবস্থিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’র আন্তর্জাতিক কার্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে তাকে ‘পাবলিশিং ম্যানেজমেন্ট’ (প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে ‘কালচারাল ডক্টোরেট’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।

জ্ঞান ও সৃজনশীল সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই ছিলেন প্রকাশকদের প্রকাশক। তার ব্যক্তিত্ব ঈর্ষণীয়। তার সচেতনতাবোধ আমাদের মুগ্ধ করতো। তিনি জ্ঞান ও সৃজনশীল সমিতির সভাপতি ছিলেন, আমি-আমরা তার সঙ্গে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন তিনি। তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠানটি আর্ন্তজাতিক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রকাশনা জগত তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

১৯৪৪ সালে ফেনীর পরশুরামে মহিউদ্দিন আহমেদের জন্ম। তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান পোস্টাল সার্ভিসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। নটরডেম কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি ‘ব্লু অ্যান্ড গোল্ড’ নামক কলেজ ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশি লেখক ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদদের রচিত বিভিন্ন বই তিনি প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে প্রকাশিত বই যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করার মাধ্যমে এই দুই দেশের মধ্যে সে সময় পর্যন্ত বিদ্যমান একমুখী এই ব্যবসায়কে তিনি বিপরীত দিকে চালনা করতে শুরু করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিকৃত পাঠ্যবইয়ের একটি বড় অংশ প্রকাশ হয় ইউপিএল থেকে।

৯০ দশকের শুরুর দিকে দেশের ইতিহাস সঠিক ও পর্যাপ্তরূপে সংরক্ষণের অভাব অনুধাবন করে ‘রোড টু বাংলাদেশ’ নামে একটি ধারাবাহিক প্রকাশনার সূচনা করেন তিনি। এই ধারাবাহিকের অধীনে প্রকাশিত বইয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা পালনকারী অন্যান্য ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৬৬-৬৯ সময়কালে কারাগারে বন্দিদশায় বঙ্গবন্ধু দিনলিপি আকারে এই আত্মজীবনী লিখেছিলেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি একইসঙ্গে ভারত (পেঙ্গুইন) ও পাকিস্তানে (ওইউপি) ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় প্রকাশ করার ব্যবস্থাও তিনি করেন।

এ ছাড়া ‘রিপোর্ট অব দ্য টাস্কফোর্সেস অন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস ফর দ্য ১৯৯০’ ইউপিএলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। মহিউদ্দিনের ভাষ্য অনুযায়ী, এরশাদ সরকারের পতনের পরপরই ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি চিত্র হিসেবে তৈরি করা হয় এটি।

মহিউদ্দিন আহমেদ রচিত বইয়ের সংখ্যা দুই। সমকালীন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের সংকলন সম্পাদনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া, দেশে ও বিদেশে পুস্তক প্রকাশনা বিষয়ে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় উন্নয়ন বিষয়েও তার রচিত অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। পুস্তক প্রকাশনায় বিরল অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৯১ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago