ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট

টি-টোয়েন্টির চাহিদা মিটেছে যাদের খেলায়

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে বেশিরভাগ ম্যাচেই উইকেট ছিল মন্থর, উঁচুনিচু বাউন্সের। লো স্কোরিং ম্যাচ তাই দেখা গেছে অহরহ। টি-টোয়েন্টির আদর্শ বাইশগজ না থাকায় রান পেতে ভুগতে দেখা গেছে বড় তারকাদেরও। ৮৪ ম্যাচের লিগে মাত্র একবার দেখ গেছে ২০০ ছাড়ানো দলীয় স্কোর। কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও অবশ্য ব্যাটের ঝাঁজে টি-টোয়েন্টির চাহিদা মিটিয়েছেন বেশ কয়েকজন
dhaka premier league Successful Cricketers

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে বেশিরভাগ ম্যাচেই উইকেট ছিল মন্থর, উঁচুনিচু বাউন্সের। লো স্কোরিং ম্যাচ তাই দেখা গেছে অহরহ। টি-টোয়েন্টির আদর্শ বাইশগজ না থাকায় রান পেতে ভুগতে দেখা গেছে বড় তারকাদেরও। ৮৪ ম্যাচের লিগে মাত্র  একবার দেখ গেছে ২০০ ছাড়ানো দলীয় স্কোর। কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও অবশ্য ব্যাটের ঝাঁজে টি-টোয়েন্টির চাহিদা মিটিয়েছেন বেশ কয়েকজন। কমপক্ষে ২৩০ রান আর ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইকরেট দেখা গেছে পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও তাদের কেউ কেউ ছিলেন প্রভাব-ফেলা ক্রিকেটার।  মজার কথা হলো এদের কেউই জাতীয় দলের নিয়মিত তারকা নন।

Shuvagata Hom
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শুভাগত হোম চৌধুরী

সাকিব আল হাসান সরে যাওয়ার পর এবার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন শুভাগত হোম চৌধুরী। ব্যাটিং, বোলিং আর নেতৃত্ব মিলিয়ে তিনিই ছিলেন মোহামেডানের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার।

বেশিরভাগ ম্যাচেই শুভাগতকে নামতে দেখা গেছে ৭ নম্বরে। দলের চাহিদা অনুযায়ী কখনো কখনো ছয় বা পাঁচে নেমেছেন তিনি। তবে কোন ম্যাচেই খুব বেশি বল খেলার সুযোগ ছিল না। নেমেই মারতে হতো এমন পরিস্থিতিতে ১৬ ম্যাচে ২ ফিফটিতে তিনি করে  ২৪২ রান।  এই ২৪২ রান তিনি করেছেন  ১৬৯.২৩ স্ট্রাইকরেটে। এত এত ব্যাটসম্যানদের ভিড়ে সবচেয়ে সেরা স্ট্রাইকরেট শুভাগতেরই। ২০ বলে ৪২, ১৫ বলে ২৫, ৮ বলে ২৩ এরকম কার্যকর ইনিংসে খেলার মোড় ঘুরানোর মুন্সিয়ানা ছিল তার ব্যাটে।

বল হাতেও টুর্নামেন্ট জুড়ে ভীষণ কার্যকর ছিলেন শুভাগত। ৬.৬৬ ইকোনমিতে ১১ উইকেট নিয়ে এই অলরাউন্ডার রেখেছেন অবদান। আবাহনীর বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডে আলোচিত ম্যাচের সেরাও তিনি।  বাকিদের কাছ থেকে সহায়তা পেলে দল হিসেবে মোহামেডানকে ভালো সাফল্য এনে দিতে পারতেন তিনি। 

Nurul Hasan Sohan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

নুরুল হাসান সোহান 

শেখ জামাল ধানমন্ডিকে এবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। তার দল পঞ্চম স্থানে থেকে লিগ শেষ করলেও সোহান ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানায় নিজেকে করেছেন আলাদা। বেশিরভাগ ম্যাচেই পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করতে দেখা গেছে তাকে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শেষ দিকের ঝড়ের দায়িত্ব ছিল তার ঘাড়েই। তা দারুণভাবে পূরণ করেছেন তিনি। ১৬ ম্যাচে ১ ফিফটিতে ৩৮৯ রান করেছেন তিনি। তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৪৯.৬১।

পরিসংখ্যান বলে দেয় কতটা আগ্রাসী ছিল সোহানের ব্যাট। ঝটপট রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেট, এক রানকে দুই রান বানানোর স্মার্টনেস দেখিয়েছেন নিয়মিত। তার মারের জোর ছিল দেখার মতো। অনেক ম্যাচ অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে মিড উইকেট, লং অন দিয়ে উড়াতে দেখা গেছে তাকে। পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে বাংলাদেশের জিম্বাবুয়ে সফরের সব সংস্করণের দলেই ঠাঁই হয়েছে সোহানের।

কিপিং দক্ষতায় অনেকের মতে বাংলাদেশের সেরা সোহান। উইকেটের পেছনে বরাবরের মতো চনমনে দেখা গেছে তাকে।

Sheikh Mehedi Hasan

শেখ মেহেদী হাসান

অলরাউন্ডার হিসেবে লিগের সবচেয়ে সফল বলা যায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের শেখ মেহেদী হাসানকে। এবার ওপেনারের ভূমিকায় খেলতে দেখা গেছে তাকে। দলের চাহিদা তাতে দারুণ মিটেছে তার ব্যাটে। ১৭ ম্যাচ খেলে ১ ফিফটিতে ৩৫৫ রান এসেছে এই ডানহাতি ব্যাটে। ১৪৩.৭২ স্ট্রাইকরেট নিয়ে খেলা এই তরুণ তেড়েফুঁড়ে মারার জন্য ছিলেন ওস্তাদ। আগ্রাসী অ্যাপ্রোচ দেখিয়ে বেশ আগে থেকেই নজর কাড়া শেখ মেহেদী নিজেকে প্রমাণ করেছেন আরেকবার। ৫৮ বলে ৯২ রান করে মোহামেডানের বিপক্ষে সুপার লিগে জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।

বল হাতেও শেখ মেহেদী ছিলেন দলের সফলতম এবং টুর্নামেন্টের পঞ্চম সফলতম। ১৭ ম্যাচে ৬.২৪ ইকোনমিতে রান দিয়ে তার শিকার ১৮ উইকেট।

Munim Shahriar
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মুনিম শাহরিয়ার

এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আগে মুনিম শাহরিয়ার ছিলেন একদমই অচেনা নাম। আগের বছর লিস্ট-এ সংস্করণে অভিষেক হলেও আলোয় আসার কারণ ছিল না। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় এই লিগেই। তাও ভাগ্যক্রমে। লিটন দাস চোটে না থাকলে হয়ত তার খেলাই হতো না।

সুপার লিগের আগে আবাহনী লিমিটেডের হয়ে একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি লিটন। লিটনের বিকল্প হিসেবে মুনিমকে খেলিয়ে বাজিমাত করেন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। ময়মনসিংহের এই ক্রিকেটার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নিজের নৈপুণ্যে। লিটন ফেরার পরও তার জায়গা তাই নড়েনি।

ওপেনার হিসেবে ১৪ ম্যাচ খেলে ২ ফিফটিতে ৩৫৫ রান করেছেন। ১৪৩.১৪ স্ট্রাইকরেট বলে দেয় তার ব্যাটের ঝাঁজ। 

Shamim Hossain Patwari
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শামীম হোসেন পাটোয়ারি

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণদের তালিকায় উপরের নাম হবেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। বাঁহাতে আগ্রাসী ব্যাটিং, ডানহাতি কার্যকর অফ স্পিন আর দুর্দান্ত এক ফিল্ডার হিসেবে তিনি চোখ ধাঁধানো প্যাকেজ।

এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতেও নিজের জাত চেতানে ভুল করেননি ২১ বছরের চাঁদপুরের ছেলে। প্রাইম দোলেশ্বরকে শেষ অবধি শিরোপা দৌড়ে রাখার তার অবদান অনেক। শামীমও ব্যাট করেন ছয় বা সাতে। এসব পজিশনে দলের চাহিদা পূরণে তিনি ছিলেন সেরাদের একজন।

১৭ ম্যাচে ১ ফিফটিতে ২৪৩ রান করেছেন ১৪৬.৩৮ স্ট্রাইকরেটে। দলের নেতিয়ে পড়া অবস্থায় ২০ বলে ৪৯ , ৩০ বলে ৫২ এসব ইনিংস খেলেছেন দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। তার ব্যাটের স্যুয়িং আর ব্যাটের গতি ছিল দেখার মতো। নামার পর থিতু হওয়ার জন্য সময় লাগে না শামীমের। নেমেই বল পেটাতে পটু যুব বিশ্বকাপ জয়ী তরুণ প্রথমবার ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলেও।

অফ স্পিন বল করেন। তবে লিগে এবার বোলিং দিয়ে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। কিন্তু বরাবরের মতই সব ছাড়িয়ে যায় তার ফিল্ডিং। এর আগে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে সেরা ফিল্ডার হয়েছিলেন। লিগেও তার কাছাকাছি ফিল্ডিং দেখা গেছে কমই। ফিল্ডিংয়ের পরিসংখ্যান জড়ো করা মুশকিল। সেরকম কোন ব্যবস্থা থাকলে হয়ত দেখা যেত প্রতি ম্যাচেই ১০-১৫ রান বাঁচিয়ে দিয়েছেন ক্ষিপ্রতা দিয়ে।

এরা ছাড়াও আগ্রাসী ব্যাটে আলো ছড়িয়েছেন প্রাইম ব্যাংকের ওপেনার রনি তালুকদার (১৬ ম্যাচে ১৩৫ স্ট্রাইকরেটে ৩৬৭ রান) , প্রাইম দোলেশ্বরের ওপেনার ইমরানুজ্জামান (১৭ ম্যাচে ১৩৪.১৭ স্টাইকরেটে ২৬৭ রান)। দল সুপার লিগে না উঠলেও ১১ ম্যাচেই ৪১৮ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্রাদার্সের মিজানুর রহমান। রেলিগেশন লিগের একদম শেষে ম্যাচে সেঞ্চুরি এসেছে প্রথম বিভাগে নেমে যাওয়া পারটেক্সের হাসানুজ্জমানের ব্যাট থেকেও।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago