আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত
গত ১ জুনের তুলনায় গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য সংকট কত দ্রুতগতিতে তীব্র হচ্ছে—আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা থেকে তা বোঝা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৬ দিনে আইসিইউ বেডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ১১১ শতাংশ বেড়ে গেছে। সাধারণ বেডে রোগী বেড়েছে প্রায় ১০২ শতাংশ।
করোনার আরেকটি ঢেউয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের আগের চিত্র এটি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার গত এক মাসে প্রতিদিন এক শতাংশ বা তারচেয়ে বেশি বেড়ে চলেছে। তার পরও, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালগুলোর মাত্র ৪০ শতাংশ বেডে রোগী ভর্তি ছিল।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সব বেডে রোগী ছিল গতকাল। এ ছাড়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬১ শতাংশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক বেড রোগী দিয়ে পূর্ণ ছিল।
কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি আইসিইউ বেডও গতকাল খালি ছিল না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বারডেমে মাত্র ৬ শতাংশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১০ শতাংশ আইসিউ বেড ফাঁকা ছিল।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং ল্যাবএইড হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল না।
পপুলার হাসপাতালে ৯৭টি বেডে এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল ও গ্রিন লাইফ হাসপাতাল- দুটিতেই ৬৫টির বেশি বেডে রোগী ভর্তি ছিল। এ ছাড়া, এভারকেয়ার হাসপাতালের কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত বেডের তিন-চতুর্থাংশ রোগী দিয়ে পূর্ণ ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায়। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর দৈনিক হিসাবে সর্বোচ্চ মৃত্যু এটি। গতকাল ১০৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে।
কোভিড-১৯ ইন্টারন্যাশনাল মডেলিং কনসোর্টিয়ামের বাংলাদেশ দলের পূর্বাভাস বলছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের পর সংক্রমণের এ ঢেউ চূড়ায় পৌঁছাবে।
করোনার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের সংক্রামক রোগের মডেলের অংশীদারদের নিয়ে এ কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়েছে।
কনসোর্টিয়ামের বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোফাখার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এপিডেমিওলোজি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ ও অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা, অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল কুদ্দুস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাফিউন শিমুল।
গতকাল রাতে পূর্বাভাস মডেলের মাধ্যমে তারা দেখতে পেয়েছেন, এবারের ঢেউয়ে দৈনিক ৭ হাজার ৯০৯ জনের মতো মানুষের করোনা শনাক্ত হতে পারে।
অধ্যাপক শাফিউন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষার সক্ষমতা একই রকম থাকলে এ অবস্থা দেখতে পাবো আমরা। আমরা যদি বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি, তবে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ১২ হাজার বা তারও বেশি হতে পারে।’
আজ দেশে নতুন করে ৫ হাজার ২৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
লকডাউনের কারণে পূর্বাভাসের সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক শাফিউন বলেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন না থাকার বিষয়টি মাথায় রেখেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তাই এতে খুব বেশি পরিবর্তন আসার কথা না।’
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
Comments