রাজধানীতে আজও পরিবহন ভোগান্তি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে শুরু হওয়া সীমিত পরিসরের ‘লকডাউনের’ তৃতীয় দিনেও গণপরিবহনের অভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন রাজধানীর অফিসগামী যাত্রীরা।
রুনা পারভীন নামে এক নারী জরুরি কাজে ঢাকা জর্জ কোর্টে যাওয়ার জন্যে সকাল ৭টায় নাখালপাড়া থেকে ফার্মগেট আসেন। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো গাড়ির দেখা পাননি তিনি।
নেত্রকোণা থেকে আসা বিজিবি সদস্য মো. আজিজুর রহমান (৬৫) যাবেন পিলখানায়। কোনো গাড়ি না পেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
শুধু রুনা কিংবা আজিজুর নয়, এই ভোগান্তি রাজধানীর অসংখ্য কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষের। কোনো পরিবহন না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ফার্মগেট মোড়ে দ্য ডেইলি স্টারকে রুনা পারভীন (৪০) বলেন, ‘এখান থেকে জর্জ কোর্টের বাস ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এখন সিএনজি ৪০০ টাকা চায়। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। এত টাকা দিয়ে যাওয়া সম্ভব না।’
‘রিকশাও এত দূর যেতে চায় না। কেউ যেতে চাইলেও ভাড়া চাচ্ছে অনেক বেশি, যা আমার পক্ষে দেওয়া অনেক কষ্টকর। কোনো কিছু না পেলে বাধ্য হয়ে হেঁটেই যেতেই হবে’, বলেন তিনি।
বিজিবি সদস্য আজিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেক টাকা দিয়েও রিকশা এতদূর যেতে চায় না। আমার যে বয়স, তাতে হেঁটেও যাওয়া সম্ভব নয়। যতই টাকা দিতে হোক, যেতে তো হবে। কিন্তু, গাড়ি, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কোনো কিছুই পাচ্ছি না।’
ঢাকা জর্জ কোর্ট চাকরি করেন অ্যাডভোকেট জামাল (৫০)। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অফিস আদালত খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া মোটেই উচিত হয়নি। রাস্তায় উবার বা পাঠাও চলতে দেয় না। তাহলে মানুষ অফিসে যাবে কীভাবে? সাধারণ মানুষের কথা ভাবার মতো দেশে কেউ নেই।’
ডেইলি স্টারের সাংবাদিক শাহীন মোল্লা কথা বলেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের সঙ্গে।
উত্তরার বিমানবন্দর এলাকা থেকে কারওয়ান বাজারে অফিসে আসা ইমরান হোসেন জানান, উত্তরা-মহাখালী সড়কে তিনি অনেক লোককে রাস্তায় গাড়ির জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। এই সড়কে রিকশা চলাচল করতে না দেওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে অফিস যাচ্ছেন। মোটরসাইকেলে একজনের বেশি উঠলে মামলা দিচ্ছে পুলিশ।
ফার্মগেট মোড়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি অফিসের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দুই জন বাইকে করে অফিস যাচ্ছিলাম। দুই জন ওঠার অপরাধে আমাকে মামলা দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। বাইকে একজনের বেশি ওঠা যাবে না। তাহলে মানুষ অফিস করবে কীভাবে, এর উত্তর কেউ দিচ্ছে না।’
গতকালের মতো আজও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক থেকে ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ জানিয়েছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে মোটরসাইকেলে একের অধিক যাত্রী থাকলেও জরিমানা করা হচ্ছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ার পয়েন্টে ইতোমধ্যে ৫০ জনেরও বেশি মোটরসাইকেল চালককে জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক (গুলশান ডিভিশন) বিভাগের সহকারী কমিশনার আশফাক আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মোটরসাইকেলে যাতে দুই জনের বেশি না ওঠে, এই বিষয়ে আমরা মানুষজনকে সচেতন করছি। তবে, কারো জরুরি কোনো কাজ থাকলে সেক্ষেত্রে আমরা কিছুটা ছাড় দিচ্ছি।’
‘গত তিন দিনে আগের তুলনায় মোটরসাইকেলের মামলা বেশি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ কাগজপত্র যাচাই করছে এবং বাইকে একজনের বেশি থাকলে মামলা দিচ্ছে’, তিনি বলেন।
Comments